গল্প-কবিতাপ্রধান সংবাদ

কানিজ কাদীরের ছোট গল্প ‘করোনাময় দিনগুলি’ (৬ষ্ঠ পর্ব)

১৪ জুলাই ডাক্তার সাহেবের আবার হিক্বাফ শুরু হয়ে গেল।মানে হেচকি্ শুরু হয়ে গেল। করোনার রুগীদের নাকি এরকম হয়। ডা: নূরউদ্দিন স্যার প্রতিদিনই রাউন্ড দিয়ে যান। উনাকে হিক্বাফের কথা বললাম। উনি ওষুধ দিতে বললেন। আবার বললেন, এই ওষুধে খুব রেস্টলেসনেস (অস্থিরতা) হয়। তবু্ও দিলেন। ইতিমধ্যে উনি খুব ইরেটেট (বিরক্তিকর) আচরণ শুরু করলেন। জুনিয়র ডাক্তাররা কেন তাঁর খোজঁ আরও নিল না। উনি খুব চিৎকার, রাগারাগি শুরু করে দিলেন। তাঁর মধ্যে মনে হচ্ছিল একটা কমপ্লেক্সসিটি কাজ করছিল নিজেকে নিয়ে। এডমিনিস্ট্রশন এর লোকজন দৌঁড়ে এল। তাঁর তদারকি আর একটু বেড়ে গেল। উনি বলতে লাগলেন, ‘৪৬ বছর ধরে আমি ডাক্তারি করছি।’ তাঁর জীবনের নানা গল্প করা শুরু করলেন।আমাদের ডাক্তারদের কোন সম্মান নাই ইত্যাদি নানা কথা।আসলে আমরা সবাই নিজেদেরকে যতটা ইমপোর্টেন্ট মনে করি অতটা ইমপোর্টেন্ট আমরা নই।
যাক, নাসিফ ও আমি মিলে তাঁকে নানাভাবে থামানোর চেষ্টা করলাম। নাসিফকে ধন্যবাদ দেই এইজন্য যে সে এ সময়ে আমাদের নানাভাবে সেবা দিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে। আমার অন্তর ভরে গেছে। আল্লাহতায়ালা ওকে অনেক সম্মান দান করুন, সুস্থ রাখুন, হায়াত দারাজ করুন।

আমি নিজের অসুখের কথা একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার শরীরটা বেশ দূর্বল লাগছিল। বেশ কাশিও হচ্ছিল। ১৪/৭/২০২১ তারিখ রাতে ওষুধ খাবার পর ডাক্তার সাহেব সত্যিই খুব রেস্টলেস (অস্থির) হয়ে পড়লেন। তাঁকে কিছুতেই স্থির করা যাচ্ছিল না। আমি আবারও ঘাবড়ে গেলাম। অক্সিজেন চলছিল। স্যাচুরেশন ৯৫% ৯৬% ছিল। তবুও রেস্টলেস। ডাক্তার ওকে ঘুমের ওষুধ দিল। ঘুমানোর পর সকালে দেখলাম বেশ ভালো। হিক্বাফ একটু কমেছে। ডাক্তার সাহেবের জ্বর কমে গেছে। ইনজেকশন পেল ৫দিন। এখন ভালই বোধ করছে। এখন শুধু সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, আর মুখে বাকী ওষুধ খেতে হবে।ডাক্তার সাহেব বাসায় আসতে চাইলেন। ডা: নূরউদ্দীন স্যার ছুটি দিতে চাইলেন ১৭/৭/২০২১ শনিবার। বাসায় যেয়ে আরও কিছুদিন বিশ্রাম নিতে হবে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার জিংক, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি করে। (চলবে)

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button