গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের গল্প ‘এমনও তো হতে পারে’ ( ১ম পর্ব)

কানিজ কাদীরের গল্প ‘এমনও তো হতে পারে’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়।

পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রদেশে। আজ রইল গল্পটির -( ১ম পর্ব)

শোভন ঘুম থেকে উঠে গেছে ভোরেই। স্কুলের ড্রেস, জুতা, মোজা শোভন নিজেই রাতে গুছিয়ে রাখে পরদিন সকালে যেন তাড়াহুড়া না লাগে।স্কুলের ব্যাগটাতেও বই খাতা গুছিয়ে রাখে। ক্লাস সেভেনে পড়ে। এই বয়সে খুব গোছানো হয়েছে ছেলেটা। রাতে শোবার আগে নিজের মশারি নিজেই টানিয়ে নেয়। মা-বাবা ভাইয়ার খাটেও মশারি টানিয়ে দেয়। পড়ার টেবিলটা নিজেই গুছিয়ে রাখে। মশারি টানাতে যেয়ে প্রতিদিন ভাইয়াকে বকা দেবে। ‘ভাইয়াটা এত অলস হয়েছে। নিজের কাজ নিজে করতে পারে না।’ ভাইয়াটা কলেজে পড়ে। ভীষণ জ্বালায় মাকে। প্রায়ই এটা আবদার ওটা আবদার। চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ি মাথায় করে নেয়। ভাইয়ার সামান্য ব্যাপারেই মাকে বিরক্ত করা শোভনের একদম পছন্দ না। মাকে শােভনের খুব পছন্দ। মা’র কখনো মন খারাপ দেখলে শোভনেরও মন খারাপ হয়ে যায়।পরদিন হয়তো ক্লাস টেস্ট। মায়ের কাছে যেতে ওর খারাপ লাগে। কিন্তু মা অংক প্রশ্ন তৈরি করে ওর পরীক্ষা নিলে ওর পরীক্ষা ভালো হবে এই ওর ধারণা। অন্যদিন না পড়ালেও পরীক্ষার আগে মা ওর পড়াগুলো একটু রিভিশন দিয়ে দেয় । আর পড়া শেষে মায়ের কাছে এসে মায়ের দোয়া ও নিবেই। মা যে কি সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে চুলে হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেয় তাতে শোভনের পরীক্ষা ভালো হবেই এই ওর ধারণা।

শোভন ভোরে উঠেই ফযরের নামায পড়ে নিয়েছে। মাকে নামাযের জন্য ওকে কখনো বলতে হয় না। পাঁচ ওয়াক্ত নামায সে ঠিকমতো পড়ে নেয়। মা আতিয়া তাহিরার ডাকে শোভন তাড়াতাড়ি স্কুলের ড্রেস পরে তৈরি হয়ে নেয়। আতিয়া তাহিরা প্রায়ই ভাবেন-‘আসলে ভিতর থেকে কোনো কিছু তৈরি না হলে জোর করে তা করা যায় না। যার যার একটা নিজস্বতা বা গুণ স্বাভাবিকভাবেই নিজের মধ্যেই তৈরি হয়ে যায়।’ শুধু ভালো রেজাল্টই মানুষের জীবনে কাম্য নয়। ভালো মানুষ হওয়া খুবই জরুরি। সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে চান মিসেস আতিয়া।
শোভন মায়ের সাথে বের হয়ে গেল। ছেলেকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে পরে মিসেস আতিয়া বাসায় আসবে। চৌরাস্তার মোড়টায় আজো জ্যাম। এত যানজট প্রতিদিন। আর ভালো লাগে না। আগে বের হলেও এ যানজটের জন্য প্রায়ই শোভনের স্কুলে পৌছাতে বেশ সময় লেগে যায়। স্কুলের কাছে মোড়ে ইউটার্ন নিতেই আজো শােভনের চোখে পড়ল ওর বয়সী সেই ছেলেটাকে। নোংরা হাফপ্যান্ট , নোংরা গেঞ্জি, উস্কোখুস্কো চুল। আজো ফুল বিক্রি করছে। ‘মা দেখ সেই ছেলেটা।’ আচ্ছা মা ও পড়াশোনা করে না, সব সময়ইতো ওকে দেখি রাস্তায় ফুল বিক্রি করতে।’ মা বলেন- ‘ওরা তো গরিব বাবা, ফুল বিক্রি করে যে টাকা পায় তাই দিয়ে হয়তো খাবার কিনে খায়। পড়াশোনা করবে কিভাবে।’ শোভনকে ভাবায় ‘ ওদেরকে দেখার কি কেউ নেই মা।’ মা বলেন- ‘ভিক্ষুকগুলো রাস্তায় এত বিরক্ত করে। আর এই যে এত ছোট ছেলে রাস্তায় পয়সা রোজগারের জন্য ফুল বিক্রি করে বেড়ায় দেখার কেউ নেই । ‘

মা বাসায় এসেই শেফালীকে ফ্রিজ থেকে মুরগি বের করতে বলে। আজ একটু রাইস রান্না করবে ভাবল। চিকেন ফ্রাই, সবজি ও চিংড়ি ভুনা।শেফালীকে নিয়ে রান্না শেষ করল মিসেস আতিয়া। তার প্রাণপ্রিয় সোনামণিরা আসবে দুপুরে খাবে মজা করে। কিন্তু ছেলের কথায় মনটা কেমন করছে। রাস্তায় ঐ ছেলেটার কথা মনে পড়ছে। শোভন বলেছে – ‘ওদের কি দেখার কেউ নেই?’ আতিয়া ভাবে-‘আমরা ছেলেমেয়েদের কত আদর যত্ন করে মানুষ করছি। কত ভালো ভালো খাবার রান্না করছি। অথচ ঐ সব শিশুদের দুমুঠো খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে। এই পৃথিবীর সবকিছু ভোগ করার অধিকার তো এইসব শিশুরও আছে।’ দুপুর দেড়টায় শোভনের স্কুল ছুটি। আতিয়া তড়িঘড়ি করে ড্রাইভারকে নিয়ে বের হয় ছেলেকে আনার জন্য। ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে বের হয়। মা দেখেছে, ‘ঐ ছেলেটারে স্কুল থেকে ফেরার পথে আর দেখা যায় না।’ মা বলে ‘ও হয়তো অন্যকোনো জায়গায় বিক্রি করতে চলে যায়।'( চলবে)

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button