কানিজ কাদীরের গল্প ‘এমনও তো হতে পারে’ (৩য় পর্ব)
কানিজ কাদীরের গল্প ‘এমনও তো হতে পারে’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়। পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি শুক্রবার প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রদেশে। আজ রইল গল্পটির -( ৩য় পর্ব)
আজ শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটি। শোভন ফ্ল্যাটের বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াল। বৃষ্টি পড়ছে।রিমঝিম বৃষ্টি। এর মধ্যে অনেকেই ছাতা মাথায় রাস্তায় বেরিয়েছে। দু-একটা কাক ভিজে ভিজেই গাছের ডালে বসে আছে। বারান্দায় রাখা টবের গাছগুলোতেও ছিটে ছিটে বৃষ্টির ফোটাঁ পড়ছে। শোভন গ্রিলের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার চেষ্টা করল। একটু পরে বেশ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো। হঠাৎ শোভনের ফুল বিক্রেতা ছেলেটার কথা মনে পড়ল। ‘আচ্ছা ও কি আজো ফুল বিক্রি করছে? এই বৃষ্টিতে ও কিভাবে রাস্তায় বেরুবে। ও থাকেই বা কোথায়।’ এরপর দেখা হলে ওকে অবশ্যই ওর নাম জিজ্ঞেস করব।’ শনিবারও স্কুল বন্ধ। রবিবার সকালে ওর সাথে নিশ্চয়ই দেখা হবে।
‘ভাইয়া তাড়াতাড়ি রেডি হও তো। সাড়ে সাতটার মধ্যে বের হতে হবে। মোড়ে যে যানজট হয়। স্কুলে দেরি হয়ে যাবে। ‘ মা টেবিলে নাস্তা শেষ করে তৈরি হয়ে নিয়েছে। দুই ছেলেকে নিয়ে এখনই বের হবে। শােভন আজ স্কুলে যাবার আগেই ভেবে রেখেছে মোড়ের ফুল বিক্রেতা ছেলেটিকে পেলেই ওর নাম জিজ্ঞেস করবে। মোড়ের কাছে আজো খুব যানজট। ছেলেটি আজো ফুল বিক্রি করছে। কিন্তু ওর মনটা আজ শোভনের মনে হলো বেশ খারাপ। ওদের গাড়ির কাছে এসে আজো ছেলেটা ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বলল- ‘খালাম্মা নেন না। মাত্র তিরিশ ট্যাকা।’ শোভন গাড়ির কাঁচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করল ‘এই তোমার নাম কি? আজ তোমার মন খারাপ কেন? তোমার বোনটি কোথায়? ছেলেটি বলল, ‘নাম দিয়া কি করবেন। ‘ খালাম্মা লন না। পচিঁশ টাকায় দিয়া দিমু। নেন না নেন না। আমার আইজ তাড়াতাড়ি বাড়িত যাওন লাগব। বইনডার খুব জ্বর। ‘ তোমার বোনের জ্বর? শোভন খুব উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কত জ্বর, কয়দিন যাবৎ জ্বর। ডাক্তার দেখাও না কেন?
‘ট্যাকা পামু কই’। আতিয়া ব্যাগ খুলে ছেলেটিকে একশত টাকা দিয়ে বলল- ‘যা জ্বরের ওষুধ কিনে খাওয়া তোর বোনকে । ‘ সিগনালের সবুজ বাতি জ্বলে উঠতেই গাড়ি ক্রস করে শোভনের স্কুলের দিকে ছুটল। মিসেস আতিয়া ভাবল, ‘এবার ঈদ-উল-ফিতরে এইসব পথশিশুদের কিছু কাপড়চোপড় কিনে বিলাব।’ শোভন বলল, ‘ছেলেটার নাম আজাে জানা হলো না। ছেলেটার নাম আমি রাজুই রেখে দিলাম।’
কয়েকদিন ক্লাস হয়েই এবার রমজান মাস পুরোটাই স্কুল বন্ধ ঘোষণা করল সরকার। স্কুল একেবারে ঈদের পর খুলবে। মিসেস আতিয়া রোজার ফাকেঁ ফাকেঁ ছেলেদের নিয়ে মার্কেটে যায়। নানা ধরনের কাপড়চোপড় কেনে নিজের জন্য, আত্নীয়ের জন্য। কিছু শাড়ি কেনে আয়া বুয়াদের জন্য।এবার শুধুই কেন যেন ঐ বাচ্চা মেয়েটা ও ওর ভাই রাজুর কথাই মনে পড়ছে। ‘ঐ মেয়েটিকে যদি একটা লাল টুকটুকে ফুলের প্রিন্টের ফ্রক পরানো যেত ওকে কি সুন্দরই না লাগত। ‘ মিসেস আতিয়ার বাসার কাছে ঈদ উপলক্ষে তাতঁ মেলা বসেছে। সেখান থেকে বাচ্চাদের জন্য দশটা শার্ট ও দশটা ফ্রক কিনে এনেছে। ভাবল ঈদের আগে রাস্তায় বের হলে ওরা যখন গাড়ির কাছে এসে সাহায্য চাইবে পিচ্চিগুলোকে শার্ট ও ফ্রকগুলো বিলিয়ে দেবে।
সত্যিই তাই হলো। মিসেস আতিয়া দুজন ছেলে ও তিন জন মেয়ে বাচ্চাকে রাস্তায় পেল। ওদেরকে হাতে কাপড়গুলো দিতেই ওদের বিস্ময়, আনন্দ দেখে আতিয়ার অন্তর এক ধরনের সুখানুভুতি কাজ করছিল। ‘রাজুর জন্য কোন শার্ট ও হীরার জন্য কোন ফ্রকটা রাখলে মা’-শোভন বলল মাকে। মা বলে ‘হীরা আবার কে?’ শোভন বলে ‘কেন মা রাজুর বোনই তো হীরা।’
স্কুলের ঐ মোড় পার হয়েই শোভনকে যেতে হয় মার্কেটে অথবা অন্য কাজে । শোভন মাকে বলল, ‘মা, রাজুকে আর দেখা যাচ্ছে না। ঐ যে ওর বোনের অসুখের কথা বলে গেল। ‘ মা বলল, ‘কি জানি কি জ্বর হয়েছিল কে জানে। বাচ্চা মেয়েটা কেমন আছে কে জানে।’ শোভন আর মিসেস আতিয়ার বাচ্চাদের কাপড়গুলো বিলানো হয়ে গেছে শুধু রাজু আর হীরার দুটি জামা গাড়িতেই রেখে দিয়েছে। যখনই ওদের পাবে দিয়ে দেবে। কিন্তু না ওদেরকে তো আর দেখা যাচ্ছে না। আতিয়া তাহিরা ভাবে, ‘ বাচ্চা মেয়েটার কোনো খারাপ কিছু হলো না তো।’ রাজু আর হীরার জামা দুটি মিসেস আতিয়া আলমারীতে তুলে রাখল। (চলবে)