গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের গল্প ‘উপলক্ষে অবকাশ’ (২য় পর্ব)

গাড়িতে বসে দু’দিকের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। ছোট ছোট ধানের চারায় ক্ষেত ভরে আছে। শুধু সবুজ আর সবুজ । দূরে দিগন্ত বিস্তৃত ঘন সবুজের সমারোহ। দূরের বাড়িগুলো একটু একটু বোঝা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে গরু ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। ছোট ছোট ডােবাগুলোতে তেমন পানি নেই। বসন্তকাল। রাস্তার দু’ধারের গাছগুলোর কচি সবুজ পাতাগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছিল। ঘন সবুজ আর হালকা সবুজ গাছগুলো মিলেমিশে একাকার। আফিয়া গুন গুন করে গেয়ে উঠল-

পলাশ ঢাকা, কোকিল ডাকা

আমার এ দেশ ভাইরে-

ধানের শীষে ঢেউ খেলানো

এমন দেশ আর নাইরে. .. . .

আমের ডালে মুকুল ধরেছে। থোকা থোকা হালকা হলুদ মুকল সহজেই দৃষ্টি কাড়ছিল। দু’দিক থেকে আসা গাছের দুপাশের ডালগুলো মিলে যেন বড় একটা গেট করেছে। তার ভিতর দিয়ে গাড়িটা যাচ্ছিল। ঘন্টা দুই আসার পর তপতীর বাবা বলল, ‘কোনো হোটেলের কাছে গাড়ি থামিয়ে কিছু খেয়ে নিই, খুব ক্ষুধা লেগেছে।’ সবাই গাড়ি থামিয়ে হোটেলে ঢুকল। হোটেলের মালিক খুব যত্ন করে নিয়ে বসাল। সবাই ডিম ভাজি দিয়ে গরম গরম পরোটা খেল। টিউবওয়েলের পানি এনে দিল।অনেক দিন পর অন্য স্বাদের পানি খেল সবাই।

আস্তে আস্তে গাড়ি মফস্বল শহরে এসে পড়লো। কিন্তু শহরটায় তেমন কোন উন্নতি চোখে পড়ল না। রাস্তাঘাট এখনো অনেক খারাপ। ড্রাইভার মোটামুটি ভাল চালিয়ে উপজেলা শহরে নিয়ে এল।

আফিয়া, তূর্য, তপতী ও ওদের বাবা বিয়ে বাড়িতে ঢুকল। খুব সুন্দর করে কাগজের ফুল দিয়ে গেট সাজানো হয়েছে।ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো নানা বর্ণের ঝালরওয়ালা কাপড়ের তাবু টানানো। বরপক্ষের বসার জায়গাও করা হয়েছে।সবাই গেট পার হয়ে একেবারে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল।চৈতীকে হলুদ শাড়িতে হলুদ পরীর মতো লাগছিল। কপালে টুকটুকে লাল টিপ ।হাতে লাল চুড়ি। বউদের মধ্যে সব সময় আলাদা একটা স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য তৈরি হয়।বরপক্ষের সুটকেস এলে চৈতী হলুদের সাজ ছেড়ে লাল শাড়ি, গয়না পড়ে ঝলমলে বউ এর সাজ সাজবে। চৈতীকে ঘিরে বেশ কয়েকজন মেয়ে। আজকাল উপজেলা শহরের মেয়েদের দেখে বুঝার উপায় নেই।কি সুন্দর করে ওরা সেজেছে। সাজসজ্জা ও স্টাইলে কোথাও  যেন কোন কমতি নেই। আসলে স্যাটেলাইটের গুনে গ্রামেগঞ্জে আর কিছু না ঢুকুক  কিছু চর্চা অবশ্যই ঢুকে গেছে। গ্রামের মানুষ অনেকেই ওরালস্যালাইন কিভাবে বানাতে হয় বলতে পারবে না, অথচ টেলিভিশনের অনেক অনেক বস্তাপজা বাংলা সিনেমা ওরা খুব পছন্দ করে। বরপক্ষ এলো প্রায় তিনটার দিকে। বরপক্ষের লোকজন এক পর্যায়ে কাউকে না বলে বরকে ভিতরে ঢুকিয়ে বউয়ের পাশে এনে বসিয়ে দিল। এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে তুমুল ঝগড়া বেধেঁ গেল।অবশেষে মুরব্বীদের হস্তক্ষেপে ঝগড়ার অবসান হলো। বরকনের বিদায় হলো। ছেলেমেয়েরা যখন কোন সম্পর্ক তৈরি করে একটু ভেবে চিন্তে করা উচিত। কারন এ প্রজন্মের  ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট আত্নসচেতন ও বাস্তববাদী। একটা ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যখন সম্পর্ক তৈরি হয় তারা কিন্তু একা থাকে না। আশে পাশেরা আপনজনদের নিয়েই তাদের চলতে হয়। আপনজনদের অবস্থান, পারিবারিক পরিবেশ তাদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। কারণ এই সম্পর্কাটি যদি সুন্দর না হয় তার পরিনতি শুধু ছেলে বা মেয়েটিকেই ভোগায় না। তার খেসারত তাদের আপনজনদের কম দিতে হয় না। (চলবে)

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button