এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু আজ
স্টাফ রিপোর্টার:
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আজ ২ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে। এই পরীক্ষা কার্যক্রম ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।এইচএসসি/ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ, এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বি.এম), ডিপ্লোমা ইন কমার্স ও আলিম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন।
গত বছরের তুলনায় এ বছর মোট পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৩৩ হাজার ৯০১ জন। বৃদ্ধির শতকরা হার ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১২০টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি।
এদিকে পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দেড় ঘণ্টা করে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিটি পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক আসতে পারবেন না। পরীক্ষা সম্পন্ন করতে যেসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে-
অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর পরীক্ষাকেন্দ্রে আসলে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হবে।
কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতীত পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না।
কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত হতে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রশ্নপত্র বহনের কাজে কালো কাঁচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।
প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত হতে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তার মনোনীত উপযুক্ত প্রতিনিধি বা ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) উপস্থিতি ব্যতীত প্রশ্ন বের করা যাবে না বা বহন করা যাবে না।
ট্রেজারি/থানা/নিরাপত্তা হেফাজত হতে পরীক্ষার কেন্দ্রে বহুমুখী নির্বাচনী প্রশ্নসহ রচনামূলক বা সৃজনশীলের সব সেটের প্রশ্ন নিতে হবে।
প্রশ্নের সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। সেই অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা নিতে হবে।
কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে বিধি অনুযায়ী প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।
পরীক্ষা চলাকালীন ও পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ব্যতীত অন্যদের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনিবার্য কারণবশত কোনো পরীক্ষা বিলম্বে শুরু করতে হলে যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের নিকট উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নজরদারি জোরদার করবে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সচেতনতার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) চাঁদপুরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এই আহবান জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে যাতে কোনোভাবেই সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত না হয়।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ছাত্র সংখ্যা ৫ লাখ ৬৩ হাজার ১১৩ জন। ছাত্রী সংখ্যা ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৪ জন। আলিম পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন। এরমধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৬১ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী সংখ্যা ৫১ হাজার ৪০৬ জন। ভোকেশনালে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন। এরমধ্যে ছাত্র সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ৮২৭ জন। ছাত্রী সংখ্যা ৪৩ হাজার ৬৪২ জন।
এদিকে, ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গ্রুপভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এসব বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন।
ঢাকা বোর্ডে তিন লাখ ১৪ হাজার ৭৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৮৬ হাজার ৭৮১ জন, মানবিকে ১ লাখ ৫০ হাজার ১৫৮ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৭ হাজার ৮০১ জন।
রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩৮ হাজার পাঁচজন, মানবিকে ৯৫ হাজার ৩৭৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৭ হাজার ৩৬৬ জন।
কুমিল্লা বোর্ডে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৫ হাজার ৩৫৭ জন, মানবিকে ৫৫ হাজার ৯০১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৬ হাজার ৫১ জন।
যশোর বোর্ডে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৯ হাজার ৩৪১ জন,মানবিকে ৯৪ হাজার ২১৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৭ হাজার ৬০২ জন।
চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ লাখ এক হাজার ১০২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২০ হাজার ৩৬৯ জন, মানবিকে ৪৪ হাজার ১৪৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৬ হাজার ৫৮৯ জন।
বরিশাল বোর্ডে ৬৮ হাজার ৪৪১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৩ হাজার ২০৪ জন, মানবিকে ৪৩ হাজার ৩২৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ১১ হাজার ৯১৩ জন।
সিলেট বোর্ডে ৬৭ হাজার ৭৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানে ১৩ হাজার ৮৮ জন, মানবিকে ৪৫ হাজার ৩০১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯ হাজার ৪০৩ জন।
দিনাজপুর বোর্ডে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২৫ হাজার ১৭৭ জন,মানবিকে ৭৭ হাজার ৩৯৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ১৩ হাজার ২২৫ জন।
ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭০ হাজার ৯৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৩ হাজার ৫০৮ জন, মানবিকে ৫০ হাজার ৩২১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৭ হাজার ১০৫ জন।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষা শুরু হয়ে থাকলেও বৈশ্বিক অতিমারির কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ বছর যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।চিত্রদেশ//এফটি//