আন্তর্জাতিক আদালতের আদেশ প্রত্যাখ্যান মিয়ানমারের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বৃহস্পতিবার যে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।
বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আদালতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ‘বিকৃত চিত্র’ উপস্থাপন’করা হয়েছে।
কোনো দেশের বিরুদ্ধে আইসিজের দেওয়া আদেশ মানার নৈতিক বাধ্যকতা রয়েছে। তবে রায় মানতে আদালত চাপ প্রয়োগ করতে পারে না।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমার গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন রাখাইনে গণহত্যার কোনো প্রমাণ পায়নি। তবে সেখানে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে, যা তদন্ত করা হচ্ছে এবং মিয়ানমারের ফৌজাদারি বিচার ব্যবস্থায় এর বিচার হবে। মানবাধিকার কর্মীদের নিন্দার কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে কিছু দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়ছে বলেও এতে অভিযোগ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘এটি রাখাইনে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপনে মিয়ানমারের সামর্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে’।
এর আগে বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় আইসিজের প্রধান বিচারপতি আবদুল কাভি আহমেদ ইউসুফ অন্তর্বর্তী আদেশ পাঠ করতে শুরু করেন। তিনি রোহিঙ্গা গণহত্যায় গাম্বিয়ার করা মামলায় চারটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণর আদেশ দেন। আদালত সর্বসম্মতভাবে এ আদেশ জারি করে।
ওই আদেশে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন চালিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দেশটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এখনও চলছে নিপীড়ন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার সরকার। এসময় মিয়ানমারের প্রতি তাদের সুরক্ষা দেয়ারও আদেশ দেন আইসিজের বিচারক।
বিচারক অভিযোগ করে বলেন, মামলায় আদালতকে যথাযথ সহযোগিতা করেনি মিয়ানমার। এসময় মামলা বাতিলের জন্য মিয়ানমার যে আবেদন করেছে সেটিও খারিজ করে দেন বিচারক। বিচারক আব্দুল কাওয়াই আহমেদ ইউসুফ স্পষ্ট জানান, এই মামলা নিয়ে মিয়ানমার যে আপত্তি করেছে সেটি গহণযোগ্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ওই ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। এ মামলার ওপর গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে শুনানি হয়। সেখানে মিয়নিমার নেত্রী অং সান সু চি নিজের দেশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, তারা রোহিঙ্গাদের ওপর কোনো নির্যাতন চালায়নি। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার মুখেই নাকি লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচিত হয়েছেন এক সময় শান্তিতে নোবেল পাওয়া সু চি।
চিত্রদেশ //এস//