প্রযুক্তি

অবৈধ মোবাইল শনাক্ত শুরু, নিষ্ক্রিয় করা যাবে হারানো ফোন

স্টাফ রিপোর্টার:
দেশে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্তের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন উপায়ে দেশের বাজারে অবৈধভাবে আসা মোবাইল ফোন শনাক্ত করার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এজন্য ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম ব্যবহার করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ।

দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বিটিআরসি। এতে মোবাইল গ্রাহকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআরসি জানিয়েছে, অবৈধ মোবাইল সেট বৈধ করার সময় পাবেন সবাই। এখনই কারও মোবাইল সেট নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ করা হবে না। নিবন্ধিত বৈধ মোবাইল সেট হারিয়ে গেলে তা নিষ্ক্রিয় করা যাবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া যাবে আরও অনেক সুবিধা।

এ বিষয়ে বিটিআরসির কমিশনার এ কে এম শহীদুজ্জামান বলেন, ‘দেশজুড়ে বর্তমানে প্রায় ১৫ কোটি হ্যান্ডসেটের চাহিদা রয়েছে। যার ৪০ শতাংশই অবৈধভাবে বাজারে প্রবেশ করেছে বা বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। আমরা এসব শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। মূলত আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্যই এটা করা হচ্ছে। সুযোগ দেয়া হবে বৈধ করার জন্য। এজন্য সবার কাছে মেসেজ যাবে। কারও মোবাইল বন্ধ হবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। বিদেশ থেকে কেনা হ্যান্ডসেটগুলোর ক্ষেত্রে বিটিআরসিতে বৈধ কাগজপত্র জমা দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে।’

অবৈধ মোবাইল শনাক্তকরণ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে ব্যবহারকারীদের মনে। একটি প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে বহুল জিজ্ঞাসিত এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে বিটিআরসি-

>> কারও হ্যান্ডসেট চুরি হলে যথাযথ ডকুমেন্ট সাবমিট করে হ্যান্ডসেট নিষ্ক্রিয় করার কোনো ব্যবস্থা থাকবে?

উত্তর: চলমান পরীক্ষাকালীন সময় (তিন মাস) অতিবাহিত হলে হ্যান্ডসেট নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা থাকবে।

>> অফিসিয়াল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই (IMEI) নম্বর বিটিআরসি ডাটাবেজে যুক্ত হতে সর্বোচ্চ কতদিন সময় লাগতে পারে?

উত্তর: বিটিআরসির অনুমোদন সাপেক্ষে দেশে উৎপাদিত অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করা সব হ্যান্ডসেট বিক্রির আগে উৎপাদনকারী/আমদানিকারকের মাধ্যমে বিটিআরসি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

>> একজনের নামে সর্বোচ্চ কতগুলো হ্যান্ডসেট রেজিস্টার করা যাবে?

উত্তর: এক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়নি। তবে বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ দুটি এবং শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি হ্যান্ডসেট সঙ্গে আনতে পারবেন।

>> এনইআইআর’র কার্যক্রম কি রাত ১২টা থেকেই কার্যকর হবে? অর্থাৎ রাত ১২টায় যে হ্যান্ডসেটে যে সিম ইনসার্ট থাকবে সেটাই নিবন্ধিত হবে কিনা? (বলা হয়েছে ৩০ জুন ২০২১ এর মধ্যে নিবন্ধিত হবে)

উত্তর: হ্যাঁ।

>> কারও হ্যান্ডসেটে সিম ১ স্লটে নিজের নামে ও সিম ২ স্লটে অন্য কারও নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম চালু থাকে তবে কোন সিম থেকে কার নামে হ্যান্ডসেট রেজিস্টার হবে?

উত্তর: IMEI নম্বর অনুযায়ী প্রতিটি স্লটে ব্যবহৃত সিমের বিপরীতে স্লটের ব্যবহার অনুযায়ী আলাদাভাবে রেজিস্ট্রেশন করা হবে।

>> বিদেশ থেকে আনা হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রে যে শুল্কমুক্ত দুটি হ্যান্ডসেটের কথা বলা হয়েছে এই দুটি হ্যান্ডসেট কি ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ফোন বাদ দিয়ে হিসেব করা হবে ?

উত্তর: ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ দুটি হ্যান্ডসেট বিনা শুল্কে বিদেশ থেকে আনা যাবে।

>> এনইআইআর-এ বিদেশ থেকে আনা মোবাইল নিবন্ধন এর ক্ষেত্রে কি চার্জ প্রযোজ্য? প্রযোজ্য হলে তার পরিমাণ কীভাবে নির্ধারণ হবে ?

উত্তর: বিদেশ থেকে আনা মোবাইল ফোন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কোনো চার্জ বা ফি দিতে হবে না।

>> বিদেশ থেকে আনা অতিরিক্ত হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কী কী ডকুমেন্ট দিতে হবে?

উত্তর: বিদেশ থেকে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসা সর্বোচ্চ দুইটি ফোন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য বা দলিলের তালিকা-

– পাসপোর্ট নম্বর

– পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন কর্তৃক প্রদত্ত আগমনের সিল সম্বলিত পাতার স্ক্যান/ছবি;

– কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত প্রমাণপত্রের স্ক্যান/ছবি; বিদেশ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে আনা ফোন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য/দলিল এর তালিকা:

– কমার্শিয়াল ইনভয়েসের স্ক্যান/ছবি;

– প্রাপকের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান/ছবি;

– কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত প্রমাণপত্রের স্ক্যান/ছবি;

>> এনইআইআর-এর আওতায় অনিবন্ধিত সেটগুলো ৩০শে জুন এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যদি নিবন্ধিত না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে কী কোনো সময় চাওয়া হবে? যদি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন না হয় তাহলে এ ব্যাপারে অভিযোগ রাখলে কী কী তথ্য গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে?

উত্তর: বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত সব হ্যান্ডসেট ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। ওই সময়ের মধ্যে সচল কোনো হ্যান্ডসেটই অনিবন্ধিত থাকবে না।

>> ৩০ জুনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যান্ডসেট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কি-না তা জানার উপায় কী? স্বয়ংক্রিয়ভাবে না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

উত্তর: স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন না হলে এসএমএস যাবে। কোনো এসএমএস না গেলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বলে গণ্য হবে। শুধুমাত্র বিদেশ থেকে আনা এবং বিদেশ থেকে উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকবে। দেশে কেনা হ্যান্ডসেট অবৈধ হলে তা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকবে না। কেনার আগে হ্যান্ডসেটের বৈধতা যাচাইয়ের সুযোগ রয়েছে।

>> অনেক আগে কেনা আনঅফিসিয়াল ফোনে ৩০ জুন তারিখে কোনো সিম অ্যাকটিভ না থাকলে বা কোনো কারণে ওইদিন নেটওয়ার্কে যুক্ত না থাকায় হ্যান্ডসেট রেজিস্টার না হলে পরবর্তীতে কী করণীয়?

উত্তর: পরীক্ষামূলক সময়ে হ্যান্ডসেটটি ব্যবহার করা যাবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

>> মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র থেকে এনইআইআর সংক্রান্ত কী কী ধরনের সেবা দেয়া হবে? নিবন্ধন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে মোবাইল অপারেটরগুলো অপারগ হলে গ্রাহকের করণীয় কী?

উত্তর: এনইআইআর সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দিতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাস্টমার কেয়ার নম্বর ১২১ ডায়াল করে এবং কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে এ সম্পর্কিত সেবা নেয়া যাবে। কোনো কারণে মোবাইল অপারেটররা সেবা দিতে অপারগ হলে বিটিআরসির হেল্প ডেস্ক নম্বর ‘১০০’ ডায়াল করে এ সম্পর্কিত সেবা নেয়া যাবে। এনইআইআর সংক্রান্ত সকল তথ্য এই লিংকে neir.btrc.gov.bd দেয়া রয়েছে।

>> একটি সিম কার্ডের সঙ্গে হ্যান্ডসেট নিবন্ধন হয়ে গেলে পরবর্তীতে নতুন সিম কার্ডের সঙ্গে নিবন্ধন করা যাবে কি-না?

উত্তর: পরীক্ষামূলক সময়ে তিন মাস ডি-রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই হ্যান্ডসেট হস্তান্তর করা যাবে। উল্লেখ্য, একজন গ্রাহক নিজ নামে রেজিস্ট্রার করা যেকোনো সিম দিয়ে যেকোনো হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে পারবেন। পরীক্ষামূলক সময় অতিবাহিত হলে ডি-রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

>> *১৬১৬১# ইউএসএসডি (USSD) ডায়াল করে ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেটের বর্তমান অবস্থা যাচাই প্রক্রিয়া এখনও একটিভ না, কবে নাগাদ একটিভ হবে?

উত্তর: ০১ জুলাই থেকে *১৬১৬১# USSD ডায়াল করে ব্যবহৃত মোবাইল হ্যান্ডসেট এর বর্তমান অবস্থা যাচাই করা যাবে।

>> আন্তর্জাতিক ও দেশি ই-কমার্স থেকে মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে তো বৈধতা যাচাইয়ের কোনো সুযোগ থাকছে না, সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

উত্তর: দেশি ই-কমার্স থেকে মোবাইল কেনার আগে অবশ্যই হ্যান্ডসেটটির বৈধতা মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD১৫ ডিজিটের IMEI নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠানোর মাধ্যমে যাচাই করা যাবে।

বিদেশ থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বৈধভাবে কেনা অথবা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য বা দলিল দিয়ে নিবন্ধনের জন্য এসএমএস দেয়া হবে। ১০ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে ওই হ্যান্ডসেট বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। ওই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করা না হলে হ্যান্ডসেটটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় অতিবাহিত হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

>> যেহেতু এমএসআইডিএন (MSISDN) এবং এনআইডির (NID) মাধ্যমে মোবাইল নিবন্ধিত হচ্ছে। সেটি পরবর্তীতে মালিকানা পরিবর্তনের সুযোগ আছে কি?

উত্তর: পরীক্ষামূলক সময়ে তিন মাস ডি-রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই হ্যান্ডসেট হস্তান্তর করা যাবে। উল্লেখ্য, একজন গ্রাহক নিজ নামে রেজিস্টার্ড যেকোনো সিম দিয়ে যেকোনো হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে পারবে। পরীক্ষামূলক সময় অতিবাহিত হলে ডি-রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

>> হ্যান্ডসেট কেনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবৈধতা সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক কোথায় যোগাযোগ করবে?

উত্তর: এনইআইআর সংক্রান্ত সব সেবা দিতে মোবাইল অপারেটরগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার নম্বর ১২১-এ ডায়াল করে এবং কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে

এ সম্পর্কিত সেবা নেয়া যাবে। কোনো কারণে মোবাইল অপারেটররা সেবা দিতে না পারলে বিটিআরসির হেল্পডেস্ক নম্বর ‘১০০’ ডায়াল করে এ সম্পর্কিত সেবা নেয়া যাবে।

চিত্রদেশ//এফটি//

Related Articles

Back to top button