অর্থ-বাণিজ্য

৩১ মার্চের মধ্যে ২ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার:

আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে চার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসন্ন রমজানের আগে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে দেড় লাখ মেট্রিক টন ও টিসিবির মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। বড় গ্রুপের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আমদানিকারকদেরও পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকবে। তাদের যদি কোনো সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন মাহে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা জানান।

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সচিব জাফর উদ্দিন, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম, মেঘনা গ্রুপের মোস্তফা কামাল, সিটি গ্রুপ, এসআলম গ্রুপ, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ছোলা, চিনি, খেজুর আমদানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, মানুষকে শান্তি ও স্বস্তিতে রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জোরাজুরি করে কোনো লাভ হবে না। তারা লাভ করুক, তবে সেটা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। বাজারে গুজব রটিয়ে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, সেই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চাহিদা যাই হোক, দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতেই হবে। তাই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসন্ন রমজানের আগেই চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুই লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এর মধ্যে সিটি গ্রুপ আমাদানি করবে ৫০ হাজার টন, মেঘনা গ্রুপ ৫০ হাজার টন, এস আলম গ্রুপ ৫০ হাজার টন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবি’র মাধ্যমে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

‘রমজানের আগে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। রমজান উপলক্ষে সিটি, মেঘনা, এসআলম গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানি করবে। তারা কোনোদিন পেঁয়াজ আমদানি করেনি। তারা পেঁয়াজ দিয়ে একেবারে লাভবান হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। এর আগে তারা যে দামে পেঁয়াজ এনেছে, সেই দামেই আমাদের দিয়েছে। তবে এবার তাদের বলেছি, মিনিমাম ৫ থেকে ৬ টাকা লাভ করতে। সরকার ব্যবসা করে না। আমাদের কাজ হলো ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। সুতরাং নতুন বছর আমাদের ভালো যাক, রমজান মাস যাতে ভালো যায় সেই কামনা করছি।’

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই অন্য মাসের মতো রমজান মাসকে বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। গেল সংকটে আমদানিকারক সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ সহায়তা করেছে।

এসময় ভবিষ্যতে ও রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় ও যৌক্তিক রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্তের সমন্বয় নেই। সঠিক তথ্য না পেলে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কৃষি থেকে চাহিদার কোনো ফিডব্যাক পাই না। চাহিদা ঠিক কত, সেটি না জানালে আমদানি হবে কীভাবে?

‘রমজান সামনে রেখে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতেই হবে। আমি আশা করছি ব্যবসায়ীরা নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করবে। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার ভাবনা পরিত্যাগ করে রমজানে সহনীয় বা সহায়তার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।’

ব্যবসায়ীদের কাছে আপিল জানিয়ে বানিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বছরটা মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করবো। আর সামনের বছরটি বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি বা সুবর্ণজয়ন্তী। তাই এ বছরটাতে সবাই সতর্ক থাকতে চাই। সবাই মিলে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো। আমি মন্ত্রী হয়েছি বটে, কিন্তু আমি যেহেতু ব্যবসায়ী তাই তাদের সমস্যাটা বুঝি। তাই আমার কথা-বার্তায় ব্যবসায়ীদের প্রতি টান লক্ষ্য করে অনেকই। তাই বলছি আপনারা একটু লজিক্যাল হন। ব্যবসায় লাভ একটু কম করেন। আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগী মনোভাব নিয়ে কাজ করবো।

তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে লোকসান হলেও পেঁয়াজ নিয়ে আর সমস্যা হতে দেব না। আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি করবো। ব্যবসায়ীরাও পেঁয়াজ আমদানি করবেন। ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসবে। সেক্ষেত্রে আমরা টোটাল প্রাইজিং সিস্টেমটা দেখবো। যাতে কোনো ব্যবসায়ী লোকসানে না পড়ে। ব্যবসায়ীদের লোকসান ঠেকাতে যা যা করণীয় সব করা হবে। তাই আপনারা পেঁয়াজ আনেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। একটি বিষয় শুধু মাথায় রাখবেন, নৈতিকভাবে রমজান মাসে ব্যবসা করবেন।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. মাজেদ বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে ভবিষ্যতে আবারও সর্তক হবার প্রয়োজন আছে। পেঁয়াজের ঘাটতির জন্য গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই পেঁয়াজ নিয়ে বেশি সমস্যা তৈরি হয়।

ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, চিনি, ভোজ্যতেলে ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। এছাড়া ভারত ব্যতীত পেঁয়াজ আমদানির সময় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানাই। আদা, রসুন, ডাল, চিনির কোনো ঘাটতি নেই। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, ভোক্তাদেরও কমদামে পণ্য দিতে হবে, আবার ভ্যাট-ট্যাক্সও বেশি দিতে হবে, এ ত্রিমুখী নীতি থেকে সরকারকে বেড়িয়ে আসতে হবে। তা নাহলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাঁচবো না। আমরা শতভাগ নির্ভরশীল সিটি, মেঘনা, এস আলম গ্রুপের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ওপর।

এফবিসিসিআই’র প্রতিনিধিরা জানান, পণ্যের দাম বাড়ার মূল কারণ সমন্বয়হীনতা। খাদ্য, অর্থ, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এখানে আগে সমন্বয় আনতে হবে। বানিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার মনিটরিং করে থাকে। দেশের ৬৪টি জেলায় তাদের মনিটরিং টিম কাজ করে। তারা শুধু ক্রাইসিস হলেই বেশি কাজ করে। এজন্য তাদের আরও একটিভ করতে হবে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের চেম্বারগুলোকে টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারলে আরও ভালো হতো।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনের সমন্বয় থাকতে হবে। সঠিক তথ্য না থাকলে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যায় না। তাই মন্ত্রনালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় এনে পলিসিগত কোনো সমস্যা থাকলে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। আর আশা করছি ব্যবসায়ীরা রমজানে নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখবে। তাহলেই আমরা রমজানে ন্যার্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারবো।

চিত্রদেশ//এস//

Related Articles

Back to top button