রাজনীতি

সেই সময় আসার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন দলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যে নাটক করছেন, তা বন্ধ করুন। তার জীবন রক্ষা করার জন্য জামিনে মুক্তি দিন। অন্যথায় এ দেশের মানুষ কখনও ক্ষমা করবে না। তখন আপনারাই ক্ষমার অযোগ্য হবেন। সেই সময় আসার আগেই তাকে মুক্তি দিন।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রোববার ঢাকা মহানগরের থানায় থানায় এবং সারা দেশে জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ৫ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ৫ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্টে বিএনপির আইনজীবীদের বিক্ষোভ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিযোগের জবাব দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল শুনানির পর দখলদারি মন্ত্রিসভার সদস্যরা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে আইনজীবীরা যেন মহাঅপরাধ করে ফেলেছেন। ওইদিন আমাদের আইনজীবীরা মুক্তির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তারা নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে ন্যায়বিচারের কথা বলেছেন।

সুপ্রিমকোর্টে অতীতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা কী নিজেরা নিজেদের চেহারা দেখেছেন। একবারও মনে করেছেন, তারা কী করেছিলেন। ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টে তৎকালীন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বিচারপতির এজলাস ভেঙেছিলেন। ওই দিন তারা আদালতে লাঠি মিছিল করেছিলেন। আইন প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৩ দিন বিচারপতিরা কোর্টে আসেননি। এজলাস লণ্ডভণ্ড। আপনাদের ওই সব তাণ্ডব ক্ষমা পেল কী করে। অতীতের কথা সুপ্রিমকোর্টকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার। পত্র-পত্রিকায় যাদের ছবি এসেছিল, পরবর্তী সময়ে তারা বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন, এখনও বিচারপতি আছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা বিএনপি করেন তাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে জড়িত ছিলেন। আমাদের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও জেলার নেতারা একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি অভিযোগ করেন, একটি মহল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চাচ্ছে। তাদের এমন একটা মনোভাব কাজ করে যে, মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ঠিকাদারিটা তাদের। যে স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে কথা বলেন সেটাকেই বিকৃত করার চেষ্টা করেন তারা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ দলটির হাত ধরে গণতন্ত্রের ক্ষতি হয়েছে। দলটির যারা মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছিলেন, তাদের হাতেই গণতন্ত্র বারবার নিহত হয়েছে। ভেঙে খান খান হয়েছে। আমরা ১৯৭৫ সালের বাকশাল ভুলে যাইনি। সে সময় সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাকশাল করা হয়েছিল। পত্রপত্রিকা বন্ধ করা হয়েছিল, জনগণের অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। একই কায়দায় তারা এখন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে জোর করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়ার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নেত্রী ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন দুটি শিশু সন্তান নিয়ে। পরে গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য ৯ বছর সংগ্রাম করেছেন। এখনও তিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে সংগ্রাম করে চলেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সেই দল যারা স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের কারণেই গণতন্ত্রের জন্য যিনি সংগ্রাম করেছেন তিনি আজ কারাগারে। লাখ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা।

তিনি বলেন, বিজয়ের এ মাসে আমাদের অফিসের সামনে আবারও পুরনো অবস্থা ফিরে এসেছে। পুলিশ-র্যা ব দিয়ে ভয় দেখানোর যত প্রক্রিয়া থাকে, সবকিছু শুরু করেছে। ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। দেশের জনগণ জেগে উঠেছে। সরকারের পতন অনিবার্য।

দেয়ালের লিখন পড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, একটু দেয়ালের লেখাগুলো পড়ুন। মানুষের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন, তাদের চোখের দিকে তাকান। প্রতিটি মানুষ ‘কনসার্ন’ এ সরকার কবে যাবে। এ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন- পেঁয়াজ, চাল, লবণের দাম বাড়ছে। কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবুও তুবড়ি ফুটিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন দেশ অত্যন্ত ভালো চলছে।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, আবদুল আউয়াল খান, আ ক ম মোজাম্মেলন হক এবং অঙ্গসংগঠনের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আনোয়ার হোসেইন, হুমায়ুন কবির খান, মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, হাসান জাফির তুহিন, মামুন হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, এজিএম শামসুল হক, বেল্লাল হোসেন, এবিএমএ রাজ্জাক, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, হেলাল খান, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, শাহ নেছারুল হক, সেলিম রেজা, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

চিত্রদেশ//এস//

Related Articles

Back to top button