অন্যান্যপ্রধান সংবাদ

মাঝারি উদ্যোক্তাদেরও ঋণের শর্ত শিথিল

স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য ঘোষিত বিশেষ তহবিল থেকে ঋণ নিতে মাঝারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নীতিমালার শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক থাকছে না। করোনার কারণে দাফতরিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় আইসিআরআর কার্যক্রম ব্যাহত ও গ্রহীতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় এই সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস্ ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় মাঝারি শিল্পের আওতায় তাদের উৎপাদন বা সেবা কার্যক্রম পুনরায় দ্রুত চালু করতে শুধু সিএমএসএমই প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে আইসিআরআর অনুযায়ী রেটিং কার্যক্রম সম্পন্ন না করে ব্যাংক কর্তৃক ঋণ প্রদান করা যাবে। তবে, প্রতিটি ব্যাংক বিদ্যমান নিজস্ব নীতিমালার আওতায় ঋণ ঝুঁকি বিশ্লেষণপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রাহক নির্বাচন করবে।

সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে জারিকৃত নির্দেশনানুযায়ী খেলাপি ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতাগণ এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। এছাড়া কোনো ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের কোনো ঋণ/বিনিয়োগ মন্দ/ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকৃত হওয়ার পর তিনবারের অধিক পুনঃতফসিলকৃত হলে এরূপ ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানও এ প্যাকেজের আওতায় ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।

উল্লেখ্য, দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছার প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ঋণের ঝুঁকি পরিমাপের নতুন নীতিমালা উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির। ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নামের এই নীতিমালায় ঋণের পরিমাণ ও গুণগত- উভয় ধরনের সক্ষমতার মূল্যায়ন শর্ত রাখা হয়। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এই শর্তগুলো পূরণ না করেও ঋণ পাবেন গ্রাহক।

আইসিআরআর নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথমত একজন গ্রাহককে এক্সিলেন্ট, গুড, মার্জিনাল ও আনঅ্যাকসেপ্টেবল- এই চার শ্রেণিতে ভাগ করবে ব্যাংকগুলো। কোনো গ্রাহক ‘এক্সিলেন্ট’ রেটিং পেলে ব্যাংক তাকে ঋণ দিতে পারবে। ‘গুড’ রেটিং পেলেও ব্যাংক তাকে ঋণ দিতে পারবে। ‘মার্জিনাল’ রেটিংধারী গ্রাহককে পুরোনো ঋণ নবায়ন বা নতুন করে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ব্যাংককে। ‘আনঅ্যাকসেপ্টেবল’ রেটিংধারীকে কোনো পরিস্থিতিতেই নতুন ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো, যদি না আগের ঋণ শতভাগ নগদ পরিশোধ হয় অথবা জামানত দিয়ে ঋণটি আচ্ছাদন করা হয়। এই শ্রেণীর গ্রাহকের আগের ঋণ সর্বোচ্চ দুবার নবায়ন বা বর্ধিত করা যাবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, রেটিং করার ক্ষেত্রে একটি পার্টি বা গ্রাহকের পরিমাণগত সক্ষমতায় ৬০ শতাংশ নম্বর এবং গুণগত সক্ষমতায় ৪০ শতাংশ নম্বর থাকবে। পরিমাণগত সক্ষমতা সূচকে ৬০ নম্বরের মধ্যে মোট গৃহীত ঋণ ও আর্থিক সক্ষমতায় ১০, চলতি দায় ও তরল সম্পদে ১০, মুনাফার সক্ষমতায় ১০, সুদ পরিশোধের সক্ষমতা ও নগদ প্রবাহের ওপর ১৫, পরিচালনগত দক্ষতায় ১০ এবং ব্যবসার মানের ওপর ৫ নম্বর থাকবে। গুণগত সক্ষমতায় ৪০ নম্বরের মধ্যে কার্যদক্ষতার আচরণে (পারফরম্যান্স বিহেবিয়ার) ১০, ব্যবসা ও খাত ঝুঁকিতে ৭, ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে ৭, জামানত ঝুঁকিতে ১১, সম্পর্ক ঝুঁকিতে ৩, পরিপালন ঝুঁকিতে ২ নম্বর থাকবে।

এই রেটিংয়ে কোনো গ্রাহক ৮০-এর বেশি নম্বর পেলে তিনি এক্সিলেন্ট শ্রেণিভুক্ত হবেন। ৭০-এর বেশি এবং ৮০-এর কম নম্বর পেলে থাকবেন গুড শ্রেণিতে। ৬০-এর বেশি এবং ৭০-এর কম নম্বর হলে মার্জিনাল এবং ৬০-এর নিচে নম্বর পেলে আনঅ্যাকসেপ্টেবল শ্রেণিতে থাকবেন। তবে কোনো গ্রাহক গুণগত রেটিংয়ে যত নম্বরই পান না কেন, পরিমাণগত রেটিংয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর না পেলে তাকে আনঅ্যাকসেপ্টেবল রেটিং দেয়া হবে।

 

চিত্রদেশ//এস//

Related Articles

Back to top button