![](https://chitrodesh.com/wp-content/uploads/2020/01/81772877_585398515624994_3985498512727998464_n.jpg)
‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প’-পর্ব ২
আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠবার পিছনের গল্প : তোফাজ্জল হোসেন তপু
দেশের যেসব তরুণ-তরণীরা সফল উদ্যোক্তা হতে চান। উদ্যোক্তা হলে কী কী গুণের অধিকারী হতে হবে। কী কী বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। কোন সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করবেন।দেশের বাজারে পণ্যের চাহিদা সৃষ্টির জন্য কী করতে হবে। মানসিকভাবে কেমন থাকতে হবে সবকিছুই আপনারা জানতে পারবেন একজন চলমান উদ্যোক্তার ‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প ‘ থেকে। জাতীয় অনলাইন দৈনিক নিউজ পেপার ‘চিত্রদেশ ডটকম’
সেসব উদ্যােক্তাদের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশের কিছু সফল, উদিয়মান, তরুণ, পরিশ্রমী, মেধাবী অগ্রগামী উদ্যোক্তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প নিয়েই চিত্রদেশ’র এই নিয়মিত আয়োজন। আপনিও আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে আপনার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প বলে। আপনার সফলতা, ব্যর্থতা, নানা প্রতিকুলতা, অর্জনের গল্পগাথাঁ শেয়ার করে আগামির তরুণ উদ্যোক্তাদের চলার পথকে আরো সুগম করুন।
আপনি আপনার গল্পটি লিখে আজই আমাদের ইমেইল করুন। অথবা আমাদের ফেসবুক পেইজে ইনবক্স করুন।
e-mail: chitrodesh@gmail.com , https://www.facebook.com/Chitrodeshcom-103573677807110/
আমাদের এ আয়োজনে এবার আপনাদের সঙ্গী হয়েছেন। এনেক্স লেদারের চেয়ারম্যান, তোফাজ্জল হোসেন তপু। আমরা আজ তার থেকে শুনবো একজন ‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প’। আজ থাকছে -পর্ব ২
লেখাপড়া শেষে একটি প্রাইভেট ব্যাংকের চাকরীতে যোগদান করি। চাকরী করতে গিয়ে দেখলাম যারা ব্যবসা করছে তাদের অধিকাংশই কম শিক্ষিত। কিন্তু তারা ভাল করছে। তাদের কাছে আমাদের মতো অসংখ্য শিক্ষিত তরুনরা ব্যাংকের লোন দিতে চেষ্টা করছে। ব্যাংকে ১ বছর ২ মাস কাজ করে অসংখ্য মানুষের সাথের মেশার ও গল্প শোনার সুযোগ হয়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী বাড়ি থেকে এককালীন টাকা না এনে নিজে নিজেই আয় করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করছে। এই বিষয় গুলো আমাকে খুব বেশি নাড়া দেয় । তার কম শিক্ষিত হয়েও ব্যবসা করতে পারছে আর আমরা শিক্ষিত হয়ে কেন পারবনা। তখন সিদ্ধান্ত নিই এই জব করে অন্য কিছু করা যাবে না। একটু রিলেক্স জব করে কিছু সময় বের করতে হবে যেন চাকরী শেষে কিছু সময় পাওয়া যায় নিজে কিছু করার।
প্রথম লিখা:
আমি বলছিনা চাকরী ছেড়ে আপনারা আমার মতো করে উদ্যোক্তা হোন। আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, একজন উদ্যোক্তার চিন্তা চেতনা আর একজন চাকরীজিবীর চিন্তা চেতনা কখনই এক হবেনা। একজন উদ্যোক্তা নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হতে চেষ্টা করে। এই রকম উদ্যোগের কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চায়।
১৯৯৭ সালের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি কারণ আমি নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩ বিষয়ে ফেল করি। ঐ বছর স্কুলের ভাল ফলের আশায় ২ বিষয়েরর উপরে যারা ফেল করেছে তাদেরকে মুল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। বাবাকে অনেক বুঝিয়ে ১৯৯৮ সালের পরীক্ষা দিই কিন্তু বাবার চাহিদা মতো রেজাল্ট করতে পারিনি। যেদিন রেজাল্ট দিল বাবাকে বললাম বাবা আমি সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেছি। বাবা আমার কথা শুনেও না শোনার মত চুপ করে রইলেন।
আমি বুঝেছি বাবা কেন কোন কথা বললেন না। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে হয়তো বাবা খুশি হবেন। বাবা শিক্ষিত না হলেও শিক্ষার প্রতি তার অনুরাগ ছিল। এইএসসি তেও সেকেন্ড ডিভিশন কিন্তু তখন বাবা অনেক খুশি হয়েছিলেন ।
স্কুল ও কলেজ জীবনে শিক্ষকদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনেছি । বুঝে হোক আর না বুঝে হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে এমন একটি স্বপ্ন ও উদ্যোগ মনের মধ্যে লালন করতে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো যোগ্যতা আমার এবং আমার খরচ দেওয়ার যোগ্যতা আমার পরিবারের নাই সেটা আমি জানতাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে সফল হওয়ার উদ্যোগ :
২০০০ সালে এইসএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাচাতো ভাইয়ের সাথে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। ভাই রাষ্ট্র বিজ্ঞানে পড়ছেন। আমাকে একটা লজিং রেডি করে দিলেন। লজিং থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু প্রথম বার বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইনি। আবার ব্যার্থতার গ্লানি মেনে নিয়ে নতুন উদ্যোমে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে এমন উদ্যোগ মাথায় নিয়ে এক দিকে বাংলার ক্লাস অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছুটে চলা। যেহেতু আমাকে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে হচ্ছে। লজিং পরিবর্তন করে শহরে গিয়ে বহুত কষ্টে একটা লজিং মানে একটা ছেলেকে পড়াতাম আর তাদের বাড়িতে দুই বেলা খেতাম। অন্য জায়গায় একটা টিউশনি করাতাম। বাড়ি থেকে যা পারতো দিতো । আরেকটা নতুন টিউশনি নিয়ে লজিং টা ছেড়ে দিলাম । কারণ ছেলেটা পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল না। ছেলেটার বাবা মা আমাকে অনেক পছন্দ করতো। একদিকে টিউশনি অন্য দিকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা কাজ গুলো মোটেও সহজ ছিল না।
একদিকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা আর অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত বাংলার একটা পরীক্ষা না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে যাওয়া। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর বাবা অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন আমাকে নিয়ে। আমি একজন বড় সরকারী চাকরিজীবী হব।
অন্যদিকে আমার পথ ধরে আমার মতো আমার এলাকার আরও ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় যে টিউশনি করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায় ও পড়াশোনা চালানো যায়। আমি এলাকায় ছোট একটা ইউনিয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কল্যাণ সংসদ নামে একটি সংগঠন করি। যার মাধ্যমে আমরা স্কুল, কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগীতা করি। এই সংগঠনটি দীর্ঘ ১২ বছর পর্যন্ত পরিচালিত হয়। যার ফলে অনেক ছাত্র -ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজেদের ভাগ্যের ও দেশের সেবায় কাজ করছে। আমি মনে করি আমার এই ছোট উদ্যোগের কারণে এলাকায় এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
চলবে…..