রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় ‘বয়ফ্রেন্ড’ আটক
স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের এক যুবককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার আটককৃত ওই যুবকের নাম আবদুর রহমান সৈকত। তিনি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক ছাত্র।
পুলিশ বলছে, আবদুর রহমান সৈকত রুম্পার ছেলেবন্ধু ছিলেন।
পাশাপাশি অপর একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি নিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে এ দুজনের বিষয়টি অফিসিয়ালি কেউ স্বীকার করেননি।
ঢাকা মাহনগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় মেয়েটির ছেলে বন্ধু স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক ছাত্র আবদুর রহমান সৈকতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শনিবার মিন্টু রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ওই ছাত্রকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হয়নি ডিবি পুলিশ।
এদিকে রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর রহস্য এখনও অজানা। হত্যা না আত্মহত্যা তা উদঘাটনে পিবিআই, ডিবি এবং সিআইডি আলাদাভাবে তদন্ত কাজ চালাচ্ছে।
এছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে (সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/৪ নম্বর বাড়ির) সিসি টিভির ফুটেজ উদ্ধার করেছে রমনা থানা পুলিশ।
ফুটেজে (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে ভবনে প্রবেশ এবং রাত পৌনে ১১টায় ভবন থেকে পড়ে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ যমুনা টিভিকে বলেন, দেখে মেনে হয়েছে রুম্পা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছে। ওপর থেকে পড়ে মারা যাওয়ার আগে তাকে ধর্ষণ কার হয়েছে কি না- সেটি নিশ্চিত হতে তার শরীরর থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি।’
রমনা বিভাগের পুলিশের সহকারি কমিশনার এসএম শামীম বলেন,‘ ঘটনাস্থলের আশপাশের ভবন থেকে একটি সিসি টিভির ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে ভিকটিমকে একা চারতলা ভবনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
তিনি আরও জানান, ফুটেজে রাত পৌনে ১১টায় ভবনের ওপর থেকে পড়ে যেতে দেখা যায়।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ভবন থেকে রুম্পা পড়েছিল ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ছাত্রদের একটি মেস রয়েছে। ঘটনার পরপরই সেখানে যেয়ে মেসটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোন থেকে একটি নম্বরে অনেক সময় ধরে কথা বলার প্রমাণ মিলেছে। ওই নম্বরের মালিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
এদিকে শনিবার সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/২ নম্বর বাড়ির সামনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি টিম।
শনিবার সকালে তারা সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং মামলার আলামত জব্দ করেন। তদন্ত প্রথমিক পর্যায়ে আছে বলেও জানান পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা।
পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি কি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করেছেন না হোমিসাইডাল (হত্যার শিকার) হয়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে কাজ করছি। দ্রুত এ রহস্য উম্মোচিত হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার লাশ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
রুম্পার বাবা মো. রুককুন উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। মা নাহিদা আক্তার পারুল গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের রুম্পা সবার বড়।
রুম্পা ২০১৪ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস্ স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৬ সালে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।
রুম্পা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ছোট ভাই আশরাফুল আলম রাজধানীর ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত।
রাজধানী ঢাকার শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতেন রুম্পা ও তার ছোট ভাই। পড়াশোনার পাশাপাশি রুম্পা টিউশনি করাতেন।
গত বুধবার টিউশনি শেষে বাসায় ফেরার পর রুম্পা। এরপর বাইরে কাজ আছে বলে আবার বাসা থেকে বের হন। কিন্তু এরপর রাতে আর বাসায় ফিরেননি। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি।
বৃহস্পতিবার রুম্পার মা-সহ স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।
চিত্রদেশ//এস//