বাংলাদেশের জন্য এপ্রিল মাস সবচেয়ে ‘ক্রিটিক্যাল’
ডেস্ক:
বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
বিবিসি বাংলার খবরে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এপ্রিল মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও সবাইকে এপ্রিল মাসে সচেতন থাকতে বলেছেন।
মঙ্গলবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন: ‘করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের এখানেও বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ট্রেন্ড আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে, এপ্রিল মাসটা। এই সময় আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।’
এদিকে করোনার বিস্তার কমাতে ছুটি, লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তারপরেও রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হবে।
৫ এপ্রিল আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশে করেছে বাংলাদেশ। কারণ ঢাকার টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর), গাইবান্ধা (সাদুল্লাপুর)-এসব এলাকায় ‘ক্লাস্টার’ বা গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে মার্চ মাসের শেষের দিকে তিনি জানিয়েছিলেন, সীমিত আকারে কমিউনিটিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে তারা দেখতে পাচ্ছেন।
ঢাকার বাইরের অনেকগুলো জেলাতেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে।
বুধবার আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের মাঝামাঝিতে রয়েছে। ভাইরাসটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লেও সেটা এখনো ক্লাস্টার আকারে রয়েছে।
সংক্রমণের প্রথম স্তর বলা হয়ে থাকে যখন দেশে কোন রোগী শনাক্ত না হয়। দ্বিতীয় স্তর বলা হয়, যখন বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত হয়। তৃতীয় স্তর হচ্ছে সীমিত আকারে সমাজে রোগটি ছড়িয়ে পড়া।
এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের এই এপ্রিল মাসটা খুব ক্রিটিক্যাল। ঢাকা শহরেই বেশিরভাগ পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জেও বেশ কিছু রোগী পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের মতো আর্থিক অবস্থার দেশ ভারতে চার সপ্তাহের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। তবে বাংলাদেশে যেখানে ১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হতেই একমাস লেগে যায়, ভারতে সেটি করা হয় ৬২টি কেন্দ্রে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী বলছেন, আমরা ৩০ দিনের দিনে যে অবস্থায় আছি, ব্রাজিল ১৫ দিনের দিন সেই অবস্থায় ছিল। মানে একশ-দেড় শ রোগী শনাক্ত করার হচ্ছিল। আর ভারতেও এরকম ছিল ৪৫তম দিনের দিন। ব্রাজিলে সেই অবস্থা থেকে আজ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। আর ভারতে রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। সুতরাং ভারতের সাথেও তুলনা করলে বোঝা যায়, আমাদের রোগীর সংখ্যা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো কয়েক হাজারে পৌঁছে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
চীন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব দেশে প্রথম দিকে করোনাভাইরাসে যে হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে, চার সপ্তাহের পরপর পরিস্থিতির রাতারাতি অবনতি হয়েছে। রোগী সংক্রমণ ও মৃত্যু হারও অনেক বেড়ে গেছে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ বলছেন, এখন যে রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা কাদের সঙ্গে মিশেছেন, কোথায় কোথায় গেছেন, কি করেছেন, তাদের বাড়িতে কে এসেছেন, কোন দোকানে গেছেন, সেগুলো বিশ্লেষণ করা, সেগুলো জানা দরকার।
চিত্রদেশ//এস//