প্রধান সংবাদমুক্তমত

অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর এ মিছিলের শেষ কবে

কানিজ কাদীর :

যাদুর শহর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রায়ই ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। বসতবাড়ি, কেমিক্যাল গুদাম, গার্মেন্ট কারখানায়, শপিং কমপ্লেক্স, সাধারণ মার্কেট, ফ্ল্যাট-বাড়ি এমনকি গরিবের একমাত্র আশ্রয়স্থল বস্তিতেও ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। এসব অগ্নিকাণ্ডের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকে, আর ঝরছে বহু তাজা প্রাণ। এভাবে অগ্নি দুর্ঘটনায় নির্মম মৃত্যুর শেষ কোথায় জিজ্ঞাসা সমাজ সচেতনদের।আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়ে শুধু একজন মানুষেরই মৃত্যু হয় না, তার সঙ্গে পরিবারগুলোও যেন হয়ে যায় নিঃস্ব।

নিমতলী
২০১০ সালের ৩ জুন । পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদাম থেকে ছড়ানো আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন। একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জন প্রাণ হারান।

তাজরীন ফ্যাশন্স
২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১৭ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন আরও কয়েকশ শ্রমিক

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দে সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।

এফআর টাওয়ার ট্র্যাজেডি
বনানীর ২২ তলা বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১টায় লাগা আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হয়।

মগবাজারের বিস্ফোরণ
২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকার ‘রাখি নীড়’ নামে একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ১২ জনের মৃত্যু হয়।

বঙ্গবাজারে আগুনে
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লেগে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

অন্যদিকে ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে গেছে। মার্কেটের মালিক সমিতি বলছে, আগুনে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি
নীমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের পর ঢাকার ট্র্যাজেডির খাতায় বৃহস্পতিবার রাতে নাম লেখালো বেইলি রোড। আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নিলো ৪৬টি নিরীহ-অসহায় প্রাণ। শুধু কি তাই? দগ্ধ হয়ে ১৮ জন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুসারে বর্তমানে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ১ হাজার ১৮৭টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৩ হাজার ৫১৮টি স্থাপনা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু রাজধানীতে রয়েছে ১ হাজার ৬৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২ হাজার ৫৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা। ঢাকায় এসব বহুতল ভবনের বিভিন্ন তলায় গড়ে উঠেছে অফিস, গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা, মার্কেট ও শপিং মল

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে সেই ৩টি কারণ হলো; বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, গ্যাসের চুলা ও জ্বলন্ত সিগারেট। এসব কারণে সারাদেশে ৭১ দশমিক ৬১ শতাংশ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৭ দশমিক ২০ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে।
দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে গ্যাসের চুলা থেকে।
তৃতীয় প্রধান কারণ হিসেবে জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরা থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাকী ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে অন্যান্য কারণে।
নগর বিশ্লেষক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘একের পর এক আগুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর দুইটি কমিটি ১৭টি সুপারিশ করেছিল। প্রতি বছর নিমতলী দিবসে আমরা দাবি তোলা সত্ত্বেও এবং বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও তা বাস্তবায়ন হয়নিদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও। বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানা যায়, অগ্নি আইন না মানার কারণে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা জরিমানা আদায় করতে দেখা যায়নি। ফলে ভবন মালিকরা সহজে অগ্নি আইন মানতে আগ্রহ দেখান না। যার পরিণাম জীবন দিয়ে ভোগ করতে হয় সাধারণ নাগরিকদের।

Related Articles

Back to top button