স্বাগতম ২০২০
স্টাফ রিপোর্টার:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- ‘দূর হইলো দৈন্যদ্বন্দ্ব/ছিন্ন হইলো দুঃখবন্ধ/উৎসবপতি মহানন্দ/তুমি সুন্দরতম।’ সত্যিকারের সুন্দরের প্রত্যাশায় পুবের আকাশে উদিত হয়েছে নতুন সূর্য।
ছড়িয়ে পড়েছে তার আলো কুয়াশার চাদর ভেদ করে। আজকের সূর্যোদয় নিয়ে এসেছে নতুন বারতা, নতুন আনন্দধারা। বিগত দিনের সব ভুল, হতাশা, দুঃখ, গ্লানি মুছে দিয়ে আজ শুরু হবে নতুন উদ্যমে সফলতার পানে এগিয়ে চলা।
রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে ২০২০ গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। উন্নয়নে নেয়া নানা উদ্যোগ পূর্ণ হবে, অগ্রগতির পথে সব জটিলতা দূর হবে- আজ এটাই সবার প্রত্যাশা।
খ্রিস্টীয় নতুন বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২০ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ বয়ে আনুক, এটাই কামনা।
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ বাঙালি জাতির জন্য একটি বিশেষ গৌরবময় বছর। এ বছরই উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আমরা ২০২০ খ্রিস্টাব্দকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছি।
তিনি বলেন, আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। তাই নতুন বছরের অঙ্গীকার হোক মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ।
দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এটি এ দেশের আপামর জনসাধারণের চাওয়া। আর এ অবস্থার মধ্যেই চলছে ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রস্তুতি। সুষ্ঠ-সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে মানুষ তার জনপ্রতিনিধিকে বেছে নেবেন, এটাই সবার কাম্য।
দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রত্যাশা করেন তারা দুবেলা-দুমুঠো খেয়ে সুখে-শান্তিতে থাকবেন। তার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম হাতের নাগালেই প্রত্যাশা করেন তারা। কিন্তু গেল বছরের নানা সময়েই তা হাতের নাগালে ছিল না।
পেঁয়াজ, চালসহ নানা পণ্য নিয়েই কারসাজি হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করে যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে লুটতরাজ চালায়, তারা দেশের শত্রু। এদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন সে দেশে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় তার আঁচ বাংলাদেশে লেগেছে। নতুন করে এটি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে কি না, সেদিকেও সবার নজর থাকবে।
বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো কাজ নির্মাণাধীন। নতুন বছরে এসব কাজ আরও দৃশ্যমান হবে, এটি সবার প্রত্যাশা। গত বছরের বেশিরভাগ সময় শেয়ারবাজার ছিল নিম্নমুখী। পুঁজিবাজারে স্বস্তি ফিরবে- এ আশায় রয়েছেন এ বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।
২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। জনজীবনে মশা ছিল বড় এক আতঙ্ক। ডেঙ্গুর এমন দশা আর কেউ কখনও দেখতে চায় না নতুন বছরে। নুসরাত, আবরার ফাহাদসহ অমানবিক কয়েকটি হত্যাকাণ্ড দেখেছে দেশবাসী। দেশের আইনশৃঙ্খলায় স্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করলেও এ দৃশ্য আর দেখতে চান না সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়েও নজর থাকবে সবার। তাদের আশ্রয় দেয়ার ফলে সৃষ্ট নানা সমস্যা কোন দিকে মোড় নেয়, তা খেয়াল রাখবে সবাই।
শিল্পায়নের জন্য আরও বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। শিল্প ও উৎপাদন খাতের বিকাশের জন্য প্রয়োজন ব্যাংক ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নেমে আসা। বহু প্রতিশ্রুতির পরও গেল বছরে তা আসেনি। এটিসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু এ বছরে মিলবে- উদ্যোক্তারা সে অপেক্ষায়ই বসে আছেন।
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা ঘটেছে ২০১৯-এ। বহু প্রতীক্ষিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন যেমন হয়েছে, তেমনি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়ও সামনে এসেছে। প্রগতির পথে ছাত্র রাজনীতি ব্যবহার হবে- এমনটাই প্রত্যাশা দেশের মানুষের।
নতুন বছর ২০২০-এ দেশের মানুষ নতুন করে জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখেন। ফেলে আসা দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন করে এগিয়ে যেতে চান সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাই আজ হৃদয়ে হৃদয়ে বেজে ওঠে একটাই প্রার্থনা- নতুন বছরটি যেন ভালো কাটে।
চিত্রদেশ//এস//