গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের ভ্রমণ কাহিনি-‘মাদুরাই’ (পর্ব-১১)

বেশ কিছুক্ষণ বসেছিলাম। এমন সময় বেশ কিছু নিগ্রো ছেলের সাথে পরিচয় হলো। ওরা আমাকে আমার নাম ও নানা প্রশ্ন করলো। ওরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। স্বন্ধ্যার আগেই রুমে গেলাম। আসর ও মাগরিব পড়ে নিচে খেতে যাব ভাবলাম। আটটার মধ্যেই রাতের খাবার খেতে হবে। খুব একাকী লাগছিল। কিন্তু একাকীত্বটাকে খুব একটা আমল দিচ্ছিলাম না। শুধু আম্মার কথা এত কিছুর মধ্যেও এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারছিলাম না। আম্মার কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিলাম আমি আমার কানের কাছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল। নিজেকে নানাভাবে বুঝ দিয়ে রুমেই বসে বসে টিভি দেখলাম কতক্ষণ। পৌনে ৮টার দিকে নীচে নামলাম রাতের খাবারের জন্য। দেখলাম অনেকেই খেতে বসেছে। ইন্দোনেশিয়ার একজন ডক্টরের সাথে পরিচয় হলো। সবগুলো নিগ্রো একটা টেবিলে গোল হয়ে বসেছে। কয়েকজন বিভিন্ন জায়গায়র মেয়েও আছে। আমি প্লেটে খাবার নিয়ে টেবিলে বসলাম। রাতে রুটি, স্ববজি,দই,কলা, আরও অনেক রান্না আছে (যেগুলোর গন্ধ সহ্য করতে পারি না।) আমি রুটি ও স্ববজি খেলাম, দইও খেলাম। খাওয়া শেষে রিসেপশন এর সামনের সোফাতে যেয়ে বসলাম । রকিবুল ও রাফিজার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ৮-৩০টা বাজে। ভাবলাম ওরা আসলে তো আমাকে খুজঁবেই । দাড়োয়ানকে বললাম ”টু মেন উইল কাম, ফ্রম বাংলাদেশ, ইউ কল মি এট ২০৩ নং রুম।”(এই দাড়োয়ান সামান্য ইংরেজী বোঝে)। দাড়ােঁয়ান আমাকে ”ওকে” বলাতে আমি ২০৩ নম্বর রুমে আসলাম। খুব নীরব। লিফট দিয়ে উপরে উঠে ঢুকতে কেন যেন একটু ভয় ভয় লাগছিল। আসলে ভয়ের কোন কারনই নাই। খুব সিকিউরড জায়গাটা। যার যার মত সবাই আছে। এখানে এসে আর একটা জিনিস অনুধাবন হলো যে এখানে বেশ ডিসিপ্লিন অনুযায়ী চলতে হয়।

রাত ৯-৩০টা দিকে আমার রুমের ফোন বেজে উঠলো।ফোনে তুলেই শুনি রকিবুলের গলা ”আপা আমরা আসছি। আপনি নীচে নামেন।” আমি নীচে নেমে ওদের সাথে দেখা করলাম। ওদেরকে সবকিছুর একটু পরিচিতি দিলাম। ওদেরকে নিয়ে ওদের রুমের লক সিস্টেম বুঝিয়ে দিলাম। রকিবুলের রুম নম্বর ৩১৫ ও রাফিজার রুম নম্বর ৩১৭। ওরা আসার পর খুব ভাল লাগল। নিজের দেশ ও দেশের মানুষ সত্যিই সবার খুব প্রিয়।(চলবে)

 

লেখক: কানিজ কাদীর

 

Related Articles

Back to top button