অপরাধ ও আইনপ্রধান সংবাদ

স্যার, চিপায় পড়লে কেউ চেনে না: সাহেদ

স্টাফ রিপোর্টার:

এই মুহুর্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রয়েছে প্রতারক সাহেদ। পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) টাকা আত্মসাতের মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে গতকাল হঠাৎ সাহেদ ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। এরপরে চিকিৎসকরা তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান। পরে জানা গেল যে, পুরো বিষয়টিই ছিল নাটক। তদন্ত এড়ানোর জন্যে হাসপাতালে থাকতে চেয়েছিলেন সাহেদ। কিন্তু তার এই চেষ্টা সফল হয়নি।

হাসপাতালে যে চিকিৎসকরা সাহেদের পরীক্ষা করেছিলেন তাদের থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সাহেদ হাসপাতালের চিকিৎসকদেরকেও বশীভূত করতে চেয়েছিলেন। তাদেরকে দিয়ে অসুস্থতার একটি সার্টিফিকেট নেয়ার চেষ্টাও করেছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গতকাল তাকে যখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয় তখন সাহেদকে প্রথম যে চিকিৎসক দেখেন তাকে সাহেদ মাস্ক খুলে বলেন যে, ‘আমাকে চিনতে পারেননি? আমি সাহেদ। আমি টকশো করেছি। আপনি আমাকে একটু রক্ষা করেন, আমার অনেক অসুখ। আমাকে একটু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’ কিন্তু সেই চিকিৎসক সাহেদকে পাত্তা দেননি।

তিনি সাহেদকে উল্টো যে, ‘আপনি সাহেদ না কে তা তো আমি জানি না। আমি আপনাকে চিনিও না। কিন্তু পত্রিকায় দেখেছি যে আপনি একজন প্রতারক।’

এসময় সাহেদ বলে যে, ‘স্যার, চিপায় পড়লে কেউ চেনে না। আগে আমার সঙ্গে কত মানুষজন থাকতো, কতজনকে আমি কতরকম সুবিধা দিয়েছি। প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে আমার ওঠাবসা ছিল। আমার ছবি নেই কার সঙ্গে? কিন্তু এখন আমি বিপদে পড়েছি। যাদেরকে আমি টাকা পয়সা দিয়েছি, যাদের আমি ফাইফরমাশ খেটেছি, যে সমস্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যা চেয়েছে তাই দিয়েছি, তারা এখন আমাকে চেনে না, তারা আমার জন্য কোন দেনদরবার করে না, তদবিরও করে না। আপনি শুধু আমাকে হাসপাতালে ক’টা দিন থাকার অনুমতি দিন, আমি নাহলে মরে যাবো।’

কিন্তু ঐ চিকিৎসক সাহেদকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তবেই দেখা যাবে যে, তার কী অবস্থা। এরপর সাহেদের ইসিজি করা হয়, প্রেসার মাপা হয় এবং ব্লাড সুগ্যারসহ অন্যান্য পরীক্ষা গুলো করে দেখা যায় যে, সাহেদ সম্পূর্ণ সুস্থ। এরপর চিকিৎসক দুদকের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন যে, সাহেদের কোন অসুস্থতা নেই এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই। এরপর সাহেদকে আবার দুদকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এদিকে সাহেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মামলার চার্জ গঠনের জন্য ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউট তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তাপস কুমার পাল বলেন, ‘অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছেন আদালত। ২৭ আগস্ট অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ ঠিক করেছেন আদালত।’

সাহেদের আইনজীবী মোহাম্মদ নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি সাহেদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাহেদ তাকে জানিয়েছেন, এক মাসের বেশি রিমান্ডে থাকায় মানসিকভাবে তিনি ভেঙে পড়েছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাহেদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর তাকে নিয়ে উত্তরায় অভিযানে যায় ডিবি পুলিশ। অভিযানে গিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।

চিত্রদেশ//এফ//

 

Related Articles

Back to top button