প্রধান সংবাদবিনোদন

১৪ মাস পর মেট্রো ট্রেনে চড়বেন যাত্রীরা

স্টাফ রিপোর্টার:
২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের ন্যূনতম উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি অংশ উদ্বোধন করা হবে। এমনটিই জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তারা জানিয়েছেন, রোববার থেকে মেট্রো ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। এভাবে পারফর্মেন্স টেস্ট চলবে ছয় মাস। এরপর তিন মাস চলবে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রান বা সমন্বিত পরীক্ষামূলক চলাচল। তারপর কমপক্ষে পাঁচ মাস যাত্রী ছাড়াই চলবে ট্রেন। পরে শুরু হবে বাণিজ্যিক চলাচল। অর্থাৎ, ১৪ মাস চলবে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

মেট্রো ট্রেন চালাতে সরাসরি চালক প্রয়োজন হবে না। চলবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। চালক দূর থেকে ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করবেন। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হলে ট্রেনকে নিরাপদে নিয়ে যাবেন চালক। চালকের প্রধান কাজ হবে ট্রেনের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খেয়াল রাখা। আর ট্রেন চলবে সময়সূচি অনুসারে। এ পর্যন্ত একজন চালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের অধীনে প্রথম ট্রেন চালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন নাসরুল্লাহ ইবনে হাকিম।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে নাসরুল্লাহ ইবনে হাকিমকে ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩০ জন চালকের নিয়োগ এখন প্রক্রিয়াধীন। এরপর আরও এক দফায় চালক নিয়োগ করা হবে।

মেট্রো রেলপথে সবমিলিয়ে ট্রেন চলাচল করবে ২৪টি। তার দ্বিগুণ চালক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ চালক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। তিনি জানান, যত ট্রেন, তার দ্বিগুণ চালক এবং সেই সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ সংরক্ষিত (রিজার্ভ) চালক থাকবেন।

নাসরুল্লাহ ইবনে হাকিম জানান, নিয়োগের পর তার শিক্ষানবিশ পর্ব শুরু হয়। চলে ২১ আগস্ট পর্যন্ত। তিনিসহ ৭৭ জন ট্রেন পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণে যাবেন ভারতের দিল্লীতে। এ প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন প্রকৌশলী ও ট্রেন কন্ট্রোলাররা।

রোববার ভায়াডাক্টের ওপর প্রথম মেট্রো ট্রেন চলাচল পরীক্ষণের সূচনা হয়। এদিন উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুরের পল্লবী পর্যন্ত গিয়ে আবার দিয়াবাড়িতে ফিরে আসে একটি ট্রেন। সময় লাগে এক ঘণ্টা।

মেট্রো ট্রেন চলাচল পরীক্ষণের সূচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট। আগামী বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রো ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন।

তিনি জানান, মেট্রোরেল রুট-৬ এর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকা মহানগরে বাণিজ্যিকভাবে ন্যূনতম উত্তরা হতে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল শুরু করবে।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০৪টি স্টেশনবিশিষ্ট একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন শেষ হয়েছে। উত্তরা ডিপো থেকে বিজয় সরণি স্টেশন পর্যন্ত ভায়াডাক্টের নির্মাণ শেষ হয়েছে।

মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনের প্রথম নয়টির কনকোর্স, প্রথম পাঁচটির প্ল্যাটফর্ম, প্রথম চারটির স্টিল রুফ স্ট্রাকচার এবং তিনটির রুফ সিটিং নির্মাণ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট স্টেশনগুলোর নির্মাণ কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ইতোমধ্যে ডিপোর রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

ভায়াডাক্টের ওপর প্রায় ১৭ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম পাঁচ স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন ও সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। ভায়াডাক্টের ওপর প্রায় সাড়ে ১৭ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম (ওসিএস) ওয়্যারিং শেষ হয়েছে।

ছয় কোচবিশিষ্ট চারটি মেট্রো ট্রেন সেট ইতোমধ্যে ঢাকার উত্তরার ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, বাকি মেট্রো ট্রেন সেট বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে। গত ১১ মে ডিপোর ভেতরে মেট্রো ট্রেনের ফাংশনাল টেস্টের শুভ সূচনা করা হয়। ইতোমধ্যে প্রথম দুটি সেটের ফাংশনাল টেস্ট শেষ করা হয়েছে।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, মেট্রোরেল রুট-৬ প্রথম পর্যায়ে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

রোববার ডিপো এলাকায় ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরুর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে জাপান অ্যাম্বাসির মিনিস্টার অ্যান্ড ডেপুটি চিফ অব দ্য মিশন হিরোইওকি ইয়ামায়া, বাংলাদেশে জাইকা অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ইহুও হায়েকাওয়া, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক, ডিএমটিসিএলের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চিত্রদেশ//এফটি//

 

Related Articles

Back to top button