প্রধান সংবাদস্বাস্থ্য কথা

হিটস্ট্রোক হলে কী করবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রচণ্ড গরম আর কাঠফাটা রোদে জনজীবন যখন হাঁসফাঁস করছে, এর মধ্যেই হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন কেউ কেউ, কারও মাথা করতে পারে ঝিমঝিম, কিংবা পেটে শুরু হতে পারে মোচড়। এমন যদি হয় বুঝবেন, আপনি কিংবা আপনার সহনাগরিক হিটস্ট্রোকের শিকার। এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

হিটস্ট্রোকে যা হয়-

রাজধানীতে মঙ্গলবার যেসব মার্কেট বন্ধ
শ্বাস হয় ঘন ঘন।
রক্তচাপ কমে যায়।
ত্বক শুকনো হয়ে যায় ।
নাড়ির গতি কমে যায়।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
অনেকের শরীরে খিঁচুনি হয়।
প্রলাপ বকে কেউ কেউ।
মস্তিষ্ক কাজ করে না।
ডায়রিয়া হয়।
এমন কিছু হলে দ্রুত যা করতে হবে-

শীতল ও ছায়াযুক্ত পরিবেশে রাখুন: হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত রোদ থেকে সরিয়ে শীতল ও ছায়াযুক্ত পরিবেশে নিয়ে যান। সবচেয়ে ভালো হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিয়ে যেতে পারলে। এমন পরিবেশ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। শরীর ঠান্ডা হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।

শ্বাস এবং সঞ্চালন পর্যবেক্ষণ: হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস এবং সঞ্চালনের উপর কড়া নজর রাখুন। যদি তিনি অজ্ঞান হয়ে যান বা শ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেন, তবে অবিলম্বে সিপিআর শুরু করুন এবং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যান। সেজন্য আপনাকে সিপিআর জেনে রাখতে হবে। এটি অনেক জরুরি অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে।

ঠান্ডা পানীয় পান: হিটস্ট্রোকের প্রভাব এড়াতে ঠান্ডা পানি বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করাতে পারেন। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয় বা খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা কিছু খেলে তা কাঁপুনির কারণ হতে পারে, যা শরীরের তাপ উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভেজা কাপড় বা আইস প্যাক: হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে যাবে। এমন অবস্থায় তার শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য শীতল ও ভেজা কাপড় বা আইস প্যাক ব্যবহার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা, ঘাড়, বগল এবং কুঁচকির দিকে এটি বেশি ব্যবহার করুন। কারণ এসব স্থান শরীরের প্রধান তাপ-বিনিময় অঞ্চল।

পোশাক ঢিলে করে দিন: এই গরমে ভারী বা আঁটসাঁট পোশাক পরা থেকে বিরত থাকুন। অন্যদেরও একই পরামর্শ দিন। যতটা সম্ভব হালকা ও প্রশান্তিদায়ক রং বেছে নিন। এই গরমে কালো রঙের পোশাক পরা এড়িয়ে চলুন। আবার কেউ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে মনে হলে তার পরনের পোশাক ঢিলে করে দিন।

হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে যা করবেন-

পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি পান করুন। কিন্তু ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করবেন না।
বারবার শুধু পানি পানে কাজ হবে না। লবণ-চিনি কিংবা ওরস্যালাইন মিশিয়ে পানি পান করুন।
বাইরের খোলা পানি পান করবেন না। তাতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
হিট স্ট্রোক হলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কোনোভাবেই শরীরে পানিশূন্যতা হতে দেওয়া যাবে না।
কোমল পানীয় বা সফট ড্রিংকস পান করা যাবে না। এগুলো হাইপার টনিক; অর্থাৎ এসব পানীয়ের ঘনত্ব বেশি। সফট ড্রিংকস পান করলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গিয়ে পানিশূন্যতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়।
যাদের সারা দিন বাড়ির বাইরে কাজ করতে হয়, তাদের সতর্ক থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি।
রোদ যখন খুব চড়া, অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে না যাওয়াই ভালো। প্রয়োজনে সকাল ও বিকেল থেকে সন্ধ্যা কিংবা একটু গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করুন। দরকারি কাজে বাড়ির বাইরে যেতে হলে সঙ্গে ছাতা কিংবা টুপি নিতে হবে রোদ থেকে বাঁচতে। সম্ভব হলে সানগ্লাস ও হাতপাখা বা ব্যাটারিচালিত ফ্যান সঙ্গে রাখতে হবে। যখনই মনে হবে শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে, বাতাস করতে হবে। কিংবা বাতাস আছে তেমন জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে।
সঙ্গে রাখতে হবে পানির বোতল ও গামছা। পানি পান করতে হবে আর প্রয়োজনে গামছা ভিজিয়ে গলা, ঘাড় মুছে নিতে হবে। তাতে আরাম মিলবে।
পরতে হবে হালকা রঙের সুতির ঢোলা পোশাক।
টানা শারীরিক পরিশ্রম না করে বিরতি দিয়ে কাজ করুন। তাতে ঘাম কম হবে এবং শরীরের ওপর চাপ কম পড়বে।
২০ মিনিট পর পর পানি পানের বিরতি নিন।
যখনই শরীরে সমস্যা দেখা দেবে, ঠান্ডা জায়গায় বসে বিশ্রাম নিতে হবে।
গরমে গরম চা বা কফি পান করবেন না।
ডাবের পানি পান করতে পারেন।
রঙিন শরবত, আখ ও লেবুর রস, রাস্তার ধারের বিভিন্ন জরিবুটি দেওয়া শরবত পান করবেন না। তাতে পানিবাহিত রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হবে।
পুরো ফল খেতে হবে, কাটা ফল নয়। কাটা ফলে ফুড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা থাকে।
বেশি তেল-চর্বি, ঝাল-মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খাবেন না। এতে হজমে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

 

//এস//

Related Articles

Back to top button