সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে যাচ্ছেন মোদি!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে নিজের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সোমবার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদি এক টুইটবার্তায় তার ফলোয়ারদের উদ্দেশে বলেছেন– ‘রবিবার থেকে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে নিজের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছি। (এ বিষয়ে) আপনাদের সবাইকে জানাব।’
পরে তার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবেও একই বার্তা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
খবরে বলা হয়, ফেসবুকে ফলোয়ারের সংখ্যায় মোদিকে পেছনে ফেলা রাজনীতিক শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০০৯ সালে যোগ দেয়া টুইটারেও ফলোয়ারের সংখ্যা ৫.৩৩ কোটি। তাই প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে যেতে চাওয়ায় অনেকের প্রশ্ন– মোদি তো সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেন না। তাই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তার সরে যাওয়া মানে জনগণ থেকে সরে যাওয়া।
কেউ বলছেন, দিল্লির সংঘর্ষে দেরিতে মুখ খোলা থেকে শুরু করে অর্থনীতি— বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেই কি এমন ভাবনা? বিশেষত তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অর্থনীতির ভরাডুবি নিয়ে কীভাবে আক্রমণ করতেন, হালে তা বার বার উঠে আসছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সোশ্যাল মিডিয়া নয় ঘৃণা ছাড়ুন: রাহুল
সোশ্যাল মিডিয়ায় খুবই সক্রিয় ভারতের এ প্রধানমন্ত্রীর এমন বার্তায় ভার্চুয়ালবাসী অবাক। এ নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মোদির টুইটবার্তায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর পাল্টা টুইট, ‘ঘৃণা ছাড়ুন। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট নয়।’
তবে রাহুল গান্ধীর টুইটবার্তায় এক বিজেপি নেতার কটাক্ষ, ‘গান্ধী পরিবারের সমস্ত বিপ্লব তো টুইটেই। মোদিজির এই ইঙ্গিতে এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক।’
ভোট-প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়াকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী মোদি সত্যিই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ভার্চুয়ালবাসীদের অনেকে মজা করে লিখেছেন– ‘এ অনেকটা শোলে-তে ট্যাঙ্কে উঠে বীরুর আত্মহত্যার হুমকির মতো! আখেরে যা ঘটবে না।’
আবার মেট্রোর কামরায় প্রশ্ন– ‘চীনের মতো ভারতেও মতপ্রকাশের সব রাস্তা কি বন্ধ করে দেয়া হবে? সারা দেশই কাশ্মীর হয়ে যাবে নাকি?’ কারও জিজ্ঞাসা– ‘ভোট-প্রচার থেকে বিরোধীদের নেটে হেনস্তা (ট্রোল)— সব বিষয়ে সিদ্ধহস্ত বিজেপি নেতা ‘সন্ন্যাস’ নিতে যাবেন কেন?’
কারও আবার মনে হচ্ছে, মার্কিন বহুজাতিককে হটিয়ে হয়তো ‘দেশি অবতার’ আনার কথা ঘোষণা করবেন মোদি। গ্রাহকদের যাবতীয় তথ্য বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার হাতে যাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন দড়ি টানাটানি চলছে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে। এই জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে আরও কিছু তথ্য।
স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের অশ্বিনী মহাজনের টুইট– ‘কখনও এভাবে ছেড়ে দেবেন না। বরং টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের দেশি সংস্করণ তৈরিতে সহায়তা করুন।’
এদিকে ভারতের মন্ত্রী ও আমলাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য হোয়াটসঅ্যাপের ধাঁচে মেসেজিং সার্ভিস তৈরি করছে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক্স সেন্টার। বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইট তৈরির দায়িত্বে থাকা ওই সংস্থার এই পাইলট প্রকল্পের নাম জিআইএমএস। অনেকের প্রশ্ন– তার পরিধি বাড়িয়ে ‘দেশি হোয়াটসঅ্যাপ’ কি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা?
তবে অনেকেরই আশঙ্কা– চীনের ধাঁচে কি ভারতেও অচল হবে ফেসবুকে অবাধ কথোপকথন বা গুগলের জি-মেল দেয়া-নেয়া?
সম্প্রতি সিএএ-এনআরসিবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে, এই ঘোষণা তার ‘প্রতিশোধের’ই প্রথম ধাপ হিসেবে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
ভারতের কোনো বড় শিল্পপতি কি বড় কোনো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবসায় আসছেন? নাকি তাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে চলা সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারিতে সুবিধা হবে সরকারের?-এমন প্রশ্নও এখন ভাসছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়।
চিত্রদেশ //এফ//