সর্বজনীন পেনশন চালু: যেভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন
দেশের নাগরিকদের পেনশনব্যবস্থার আওতায় আনতে বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করছে সরকার। আগামী দিনে বেসরকারি চাকরি থেকে অবসরে গিয়েও পেনশন সুবিধা ভোগ করা যাবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বকর্মে নিয়োজিত ও স্বল্প-আয়ের নাগরিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এতে অংশ নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে আজ থেকেই সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।
বহুলপ্রত্যাশিত এই ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’ জন্য সরকার পৃথক একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। সেটি হচ্ছে www.upension.gov.bd।
চার স্কিমের মধ্যে রয়েছে- প্রবাস স্কিম (প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য), প্রগতি স্কিম (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য), সুরক্ষা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য) এবং সমতা স্কিম (স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য)।
রেজিস্ট্রেশন করতে কী কী লাগবে, কিভাবে করবেন
জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের শাখা, রাউটিং নম্বর, নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ বা পাসপোর্ট নম্বর, নমিনির মোবাইল নম্বর এবং নিজের বার্ষিক আয় জানা থাকতে হবে।
রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে
ছয়টি ধাপে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রথমে আপনাকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর সবার ডান পাশের পেনশনার রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করতে হবে।
১ম ধাপ— ব্যক্তিগত তথ্য
রেজিস্ট্রেশন করুন ফরমের প্রথমেই লেখা থাকবে—‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’
এই পেজের নিচের দিকে আমি সম্মত আছি বাটনে ক্লিক করে প্যাকেজ/স্কিম নির্বাচন করতে হবে; এনআইডির নম্বর দিতে হবে; জন্মতারিখ নির্বাচন করতে হবে; মোবাইল নম্বর দিতে হবে; ইমেইল আইডিও দিতে হবে। তারপর ক্যাপচা প্রদান করে পরবর্তী পেজে যেতে হবে।
এরপর আপনার মোবাইলে একটি ওটিপি যাবে। সেটি প্রদান করতে হবে। এরপর পরবর্তী পেজে চলে যাবে। সেখানে আপনার এনআইডির ছবিসহ যাবতীয় তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। এই পেজে আপনাকে বার্ষিক আয় উল্লেখ করে পেশা সিলেক্ট করতে হবে। এরপর বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সিলেক্ট করতে হবে।
২য় ধাপ— স্কিম তথ্য
এরপর পরবর্তী পেজে স্কিম সিলেক্ট করাই থাকবে। আপনাকে শুধু মাসিক চাঁদার পরিমাণ সিলেক্ট করতে হবে এবং চাঁদা পরিশোধের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি মাসিক, ত্রৈমাসিক কিংবা বার্ষিকভাবে চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন। এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৩য় ধাপ— ব্যাংক তথ্য
এই পেজে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর উল্লেখ করে হিসাবের ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর রাউটিং নম্বর জানা নাই বাটনে ক্লিক করে ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সিলেক্ট করতে হবে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সিলেক্ট হয়ে যাবে।
৪র্থ ধাপ— নমিনি তথ্য
এরপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে নমিনির পেজ আসবে। সেখানে নমিনির আইডির ধরন সিলেক্ট করতে হবে। এখানে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের অপশন আছে। নমিনির যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে তাহলে তার নম্বর ও জন্মতারিখ দিতে হবে।
এরপর নমিনি সিলেক্ট করুন বাটনে ক্লিক করলে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চলে আসবে। সেখানে নমিনির সম্পর্কের ঘরে সম্পর্ক সিলেক্ট করতে হবে, নমিনির প্রাপ্যতার হার কত শতাংশ দিতে চান সেটি উল্লেখ করতে হবে। নমিনির মোবাইল নম্বরও যোগ করতে হবে। আপনি চাইলে এভাবে আরও নমিনি যুক্ত করতে পারবেন।
৫ম ধাপ— সম্পূর্ণ ফর্ম
এরপর পরবর্তী পেজে চলে গেলে সেখানে সম্পূর্ণ ফর্মটি দেখাবে। এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোড করতে পারবেন। কিংবা পুরো ফরম দেখে সংশোধনও করতে পারবেন।
সবার নিচে লেখা থাকবে— ‘আমি নিশ্চিত করছি যে, উল্লিখিত সকল তথ্য সঠিক এবং আমি সর্বজনীন পেনশনের সকল আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে অবগত হয়ে এতে সম্মতি প্রদান করছি।’ সম্মতি প্রদান চেক বক্সে টিক দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৬ষ্ঠ ধাপ— পেমেন্ট
এরপর পেমেন্ট পেজ আসবে। এখানে স্কিমের নাম, চাঁদা প্রদানের ধরন ও কত টাকা চাঁদা সেটি দেখাবে। সঠিক থাকলে পেমেন্ট করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট বা ই-ওয়ালেট, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ভিসা ও মাস্টার কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন রকেট, বিকাশ, নগদ, উপায় বা ট্যাপের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
তবে একই সার্ভিসের জন্য আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পেমেন্ট/কর্তন হলে দ্বিতীয় বার পেমেন্ট না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করার পূর্বে কার্ড এর গেটওয়েতে যাওয়ার পরে কার্ড এর প্রথম সংখ্যা আগে থেকেই লেখা আছে কিনা খেয়াল করুন। প্রথম সংখ্যা লেখা থাকলে প্রথম সংখ্যা বাদ দিয়ে বাকি সংখ্যা দিন।
সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন। সরকারের সর্বজনীন কর্মসূচিতে ১৮ বছর বয়সে যুক্ত হলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা মিলবে। যুক্ত হতে বয়স যত বাড়বে, আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে সুবিধাও। এভাবে যে কেউ তাঁর মোট চাঁদার (কিস্তি) চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ টাকা পেনশন পাবেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের গত রোববার জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।