সবজি ছাড়া সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে এখনই বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। ক্রেতারা বলছেন, যাতে রমজান এলে বাড়তি দাম দেখে হইচই না পড়ে তাই আগ থেকেই ব্যবসায়ীদের এই কারসাজি শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাপ্তান বাজার, যাত্রাবাড়ীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজি বাদে সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। ছোলাসহ সব ধরণের ডাল, খেজুর, তেল, আদা-রসুন-পেঁয়াজ, হলুদ-মরিচ, চিনি, লবণ, মুরগি সব কিছুতেই দোকানি বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। আর বেড়ে যাওয়া দাম শুনে পণ্য কিনতে আসা অনেক ক্রেতাই আঁতকে উঠছেন।
কথা হয়, রাজধানীর কাপ্তান বাজারে আসা মো. মফিজুল ইসলাম ও খোরশেদ আলমের সঙ্গে। এই ক্রেতাই মন্তব্য করেন, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। আর এ অবস্থা অন্তত গত ২৫ দিন আগে থেকেই।
তাদের ধারণা, গত কয়েক বছরের মতো এবারও ১ থেকে ১০ রমজান পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকবে।
রমজানের আগেই নিত্য পণ্যের বাজার কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানান তারা। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
দেখা যায়, বাজারে মসুর ডাল (প্রতি কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, যা আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা (প্রতি কেজি), যা আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ।
এদিকে প্রতি কেজি পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে (প্রতি কেজি) ১০৬ থেকে ১১০ টাকা টাকা, যা আগে ছিল ৯৯ থেকে ১০২ টাকা। খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১২০ টাকা (প্রতি কেজি), যা আগে ছিল ১১০ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬১০ টাকা থেকে ৬৪০ টাকা। যা আগে ছিল ৫৩০ থেকে ৫৬০ টাকা।
চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা (প্রতি কেজি), আগে ছিল ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা। খেজুর ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা।
দেশি পেঁয়াজ কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। দেশি রসুন ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা।
দেশি শুকনা মরিচ কেজি ২৮০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে ছিল ২২০ থেকে ২৭০ টাকা। দেশি হলুদ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, আগে ছিল ১৯০ থেকে ২২০ টাকা।
প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ২৪০ থেকে ৩৪০ টাকা, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬২০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাবদা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৯০ থেকে ৬২০ টাকা, আগে ছিল ৫৮০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা (প্রতি কেজি), আগে ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। প্রতি কেজিতে দাম বেড়ে সোনালি মুরগি (কক) বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।
ডিমের দাম ৫ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, হাঁসের ডিম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের ডজন ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রহমান বলেন, এখন মুরগির উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে। শীতে ফার্মগুলোতে মুরগি বেশি মারা যায়। এসব কারণে এখন বাজারে মুরগির দাম বাড়ছে। তবে বাজারে সবজির দাম অপরিবর্তিত আছে।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রমজানের আসার এক-দুমাস আগ থেকে নিত্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে রমজান আসার আগে বাজার মনিটরিং করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, বাজার সঠিকভাবে মনিটরিং করা না গেলে যে সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে, তা রমজান পর্যন্ত থামানো যাবে না। তাই এখন থেকে বাজার কঠোরভাবে মনিটরিং করা উচিত।
ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ১৫ দিনের পণ্য একদিনে কিনবেন না। এতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এ কারণেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
এবিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, রমজান মাসে সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করা হবে। একাধিক সংস্থা কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। অনিয়ম পেলে কঠোর ব্যবস্থায় নেওয়া হবে।
চিত্রদেশ//এইচ//