লেখালেখি আমার আত্মার খোরাক: কবি-আব্দুল কুদ্দুস
এফ এম আব্দুল কুদ্দুস। কবি । যদিও উনি পেশায় একজন ব্যাংকার। জন্ম বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার ডোমার গ্রামে। বেড়ে উঠা ও বগুড়াতেই। পড়াশোনা করেছেন বগুড়ার কাহালু উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি আজিজুল হক কলেজে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তামানে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকে কর্মরত। ব্যাংকার হয়েও মননশীলতায় আকৃষ্ট হয়ে লেখালেখিতে অবসর সময় কাটান। তার প্রথম কবিতার বই ‘জাগ্রত চিত্তে’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ একুশে বইমেলায়। এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ‘আত্মার নির্জনে’ তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। তার লেখালেখির নানান বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ‘চিত্রদেশ’ এর সঙ্গে। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন- শেখ লাভলী হক (লাবণ্য)
চিত্রদেশ: এবারের একুশে বইমেলায় আপনার কোন বই প্রকাশিত হচেছ?
আব্দুল কুদ্দুস: ‘আত্মার নির্জনে’ কবিতার বই। বেহুলাবাংলা প্রকাশন থেকে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে।
চিত্রদেশ: এটি আপনার কততম কবিতার বই?
আব্দুল কুদ্দুস: এটি আমার দ্বিতীয় কবিতার বই। আমার প্রথম কবিতার বই ‘জাগ্রত চিত্তে’ প্রকাশিত হয়েছিল গতবছর একুশে বই মেলায়। একই প্রকাশনী থেকে।
চিত্রদেশ: কিসের তাগিদে আপনার এই লেখালেখি?
আব্দুল কুদ্দুস: লেখালেখি আসলে আমার আত্মার খোরাক। আমার পেশা ব্যাংকিং। কিন্তু আমি মনের আনন্দে এবং মনের খোরাকের জন্য লেখি।
চিত্রদেশ: আপনার প্রকাশিত দুটি বই থেকে কোন বইটি আপনার বেশি ভালো লেগেছে?
আব্দুল কুদ্দুস: এটা বলা আসলে খুব কঠিন। আসলে দুটিই বই আমার সৃষ্টি। তো কোনটা বেশি ভালো সেটা বলা জটিল। তবে আমি মনে করি যে, আমার লেখাগুলো দিন দিন ইনরিচ হচ্ছে। আমার ফেসবুক বন্ধুদেরও এমনই মন্তব্য।
চিত্রদেশ: আপনি লেখালেখি শুরু করেন কবে থেকে এবং কিভাবে?
আব্দুল কুদ্দুস: এটা অনেক আগে থেকে। সেটা নির্দ্দিষ্ট করে বলা যাবে না। আগে ছোট ছোট দু’চার লাইন করে লিখতাম সেটাই সংরক্ষণ করতে করতে আজ এই বড় পরিধিতে লেখালেখি।
চিত্রদেশ: কার অনুপ্রেরণায় আপনার লেখালেখিতে আসা?
আব্দুল কুদ্দুস: আমি খুব বই পড়তাম। রবীন্দ্রনাথ, শরৎ চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়, নজরুল বিশেষ করে জসিমউদ্দিনের কবিতা জীবনানন্দ দাসের কবিতা ও খুব ভালো লাগতো । তাদের কবিতাগুলোয় বলা চলে আমার লেখালেখির জন্য অনুপ্রেরণায় যুগেয়েছি।
চিত্রদেশ: আপনি কোন ধরনের লেখা লিখতে মানে কবিতা, গল্পে, উপন্যাস কি লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?
আব্দুল কুদ্দুস: আমি এখন কবিতা লিখছি। কবিতা লিখতেই ভালো লাগে। তবে আগামিতে উপন্যাস লেখায় যাবো। সামনের বইমেলায় (২০২১) হয়তো উপন্যাস আসতে পারে।
চিত্রদেশ: আপনার কবিতাগুলোতে সাধারণত কোন বিষয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?
আব্দুল কুদ্দুস: ভাবগত দিকটাই বেশি প্রাধান্য দিই। আমাদের যেসব অব্যক্ত কথাগুলো বলতে পারি না। আর আমার প্রথম বই ‘জাগ্রত চিত্তে’ বইয়ে নৈতিকতা, নৈতিকতার যে অবক্ষয় সেটাই তুলে ধরেছি।
চিত্রদেশ: আপনার রচিত আপনার প্রিয় ২/১টি কবিতার নাম বলুন?
আব্দুল কুদ্দুস: এটা একটা কবির জন্য খুবই ডিফিকাল্ট। তবুও কয়েকটা কবিতার কথা না উল্লেখ করলেই নয়। যেমন-‘পিতা পুত্র নিয়ে’ ‘মা’ নিয়ে ‘পদ্যের প্রথম পাঠ’ ‘তৃষিত প্রাণে’ ’আত্মার নির্জনে’ ।
চিত্রদেশ: দেশের মধ্যে আপনার প্রিয় কবির নাম বলুন?
আব্দুল কুদ্দুস: কবি জীবনানন্দ দাশ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জসিমউদ্দিন, সামসুর রহমান, মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজ।
চিত্রদেশ: কোন বিষয়য়ের জন্য উনাদের কবিতাগুলো আপনার ভালো লাগে?
আব্দুল কুদ্দুস: উনারা প্রত্যেকেই প্রকৃতি প্রেমিক। এবং উনারা মানবতা বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এই বিষয়টার জন্য আমার তাদের কবিতাগুলো বেশি ভালো লাগে।
চিত্রদেশ: আপনি কোন ধরনের পাঠকদের কথা মাথায় রেখে আপনার কবিতাগুলো রচনা করেন?
আব্দুল কুদ্দুস: সব ধরনের পাঠকই রয়েছেন। তার মধ্যে বিশেষ করে যারা নিজেকে চেনা এবং জানা এই দুটা জিনিস চিন্তা করে তাদের জন্যই আমার কবিতাগুলো এপ্রোপিয়েট । যাকে বলে ‘নো দাই সেলফ’- নিজেকে জানুন।
চিত্রদেশ : বর্তমান প্রজন্মের বই পড়া নিয়ে কিছু বলুন?
আব্দুল কুদ্দুস: কেন যেন ইদানিং তরুণ প্রজন্মের মাঝে বই পড়া খুব কমে গেছে। মানুষ খুব বই বিমূখ। বর্তমানে টেকনোলজির কারণে মানুষ হয়তো বই পড়া বিমুখ হয়েছে।
চিত্রদেশ: এই সমস্যা উত্তরণের জন্য কি করা যেতে পারে?
আব্দুল কুদ্দুস: হার্ডকপি পড়ার বিকল্প নেই। দেশে আব্দুললাহ আবু সায়ীদ স্যারের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীর উদ্যোগের মতো আরো কিছু সংগঠনের এমন উদ্যোগী হওয়া উচিত। আরেকটা ব্যাপার হলো ইদানিং মানসম্মত কবিতা, উপন্যাস, গল্প তেমন হচ্ছে না। যেটা হুমায়ূন আহমেদ বা মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যা আসছে সেটা খুব কম।
চিত্রদেশ: নতুন লেখকদের বিষয়ে বলুন?
আব্দুল কুদ্দুস: নতুন লেখকদের প্রচুর বই পড়তে হবে
চিত্রদেশ: লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?
আব্দুল কুদ্দুস: আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সেক্টরে কাজ করি। সেখানে আসলে তেমন কিছু করার সুযোগ নেই । তবে চাকরির অবসরে লেখালেখিই হবে আমার একমাত্র অবলম্বন হবে।
চিত্রদেশ //এস//