রেকর্ড গড়ে জিতলো উইন্ডিজ
স্পোর্টস ডেস্ক
যে ম্যাচে বাংলাদেশের জয় নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না, সেই ম্যাচই এখন হারতে হলো স্বাগতিক বাংলাদেশের। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে পাত্তা না পেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে টেস্টে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখালো। অভিষেকে কাইল মায়ার্সের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে চমকে দিলো উইন্ডিজ। শেষ দিন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের অনবদ্য পারফরম্যান্সে ৩ উইকেটে জিতেছে ক্যারিবিয়ানরা।
টেস্ট ইতিহাসের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকালেন কাইল মায়ার্স। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার কোনও ব্যাটসম্যান এই কীর্তি গড়লেন। আর লরেন্স রোওয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম টেস্টে দ্বিশতক করলেন মায়ার্স।
মেয়ার্সের ব্যাটে আজ আরেকটি রেকর্ড হয়ে গেছে। আরেক অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান একনক্রুমা বোনারের সঙ্গে তিনি ২১৬ রানের জুটি উপহার দিয়েছেন। এটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ। তাছাড়া চতুর্থ ইনিংসে দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের সেরা জুটি। এনক্রুমা বোনার আউট হয়েছেন ২৪৫ বলে ৮৬ রান করে। ২১০ রানে অপরাজিত ছিলেন মেয়ার্স। দুই ইনিংস মিলিয়ে ক্যারিবিয়ানদের সামনে ৩৯৫ রানের পাহাড়সম লিড দাঁড় করিয়েছিল মুমিনুল হকের দল। বাংলাদেশের লিডটা কতোটা নিরাপদ ছিল পরিসংখ্যান ঘাটলেই বুঝা যায়। টেস্ট ইতিহাসে অতীতে এশিয়ায় এতো রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। ক্রিকেট ইতিহাসে এটা তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতা ম্যাচ। আর সব মিলিয়ে হিসেব করলে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার তালিকায় এর অবস্থান পঞ্চমে। তিন উইকেটের অবিশ্বাস্য এই জয়ে বাংলাদেশের ‘খলনায়ক’ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের নায়ক কাইল মেয়ারস ও এনক্রুমার বোনার।
পুরোদিনেই বাংলাদেশের বোলিং ছিল অধারাবাহিক। অনেক বলেই টার্ন মিলেছে বেশ, বাউন্স অনেক সময়ই ছিল অসমান। কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের চাপে ফেলার মতো বা পরীক্ষা নেওয়ার মতো টানা ভালো জায়গায় বোলিং করে যেতে পারেননি কেউ। বিশেষ করে অফ স্পিনার নাঈম হাসান প্রায় প্রতি ওভারেই করেছেন আলগা বোলিং। উরুর চোটের কারণে মাঠে নামতে না পারা সাকিব আল হাসানের অভাব ফুটে উঠেছে প্রকট হয়ে। এমনকি দ্বিতীয় নতুন বলেও সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেননি কেউ।
মেয়ার্স-বনারের জুটিতে বাংলাদেশ ভাঙন ধরাতে পারত দিনের প্রথম ঘণ্টায়ই। জুটি ভাঙার তিনটি পরিস্কার সুযোগ এসেছিল সামনে। মেয়ার্সের ৪৭ রানের তাইজুল ইসলামের বলে জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ নেয়নি রিভিউ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লাগছিল স্টাম্পে।
মেয়ার্সই একটু পর জীবন পান ৪৯ রানে। মেহেদি হাসান মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও সুযোগটি ছিল কঠিন। জীবন পাওয়ার বলেই মেয়ার্স পূরণ করেন ফিফটি।
আউট হতে পারতেন বোনারও। নাঈম হাসানের একটি তীক্ষ্ণ টার্ন করা বলা লাগে বোনারের প্যাডে। তাতেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। বোনার বেঁচে যান ২৫ রানে।
ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে জয়ের জন্য যেখানে ক্যারিবীয়দের দরকার ২৮৫ রান, সেখানে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭ উইকেট। টেস্টের পঞ্চম দিনের উইকেট বিবেচনা ও স্বাগতিকদের স্পিন শক্তি শক্ত হওয়ায় বাংলাদেশকে নিয়েই বাজি ছিল সবার। কিন্তু মেয়ার্স ও বোনারকে আটকাতে পারেননি স্বাগতিকরা। অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দুই ব্যাটসম্যানকে সেট হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন টাইগার বোলারারা। তাতে দায় ছিল ফিল্ডারদের, শুরু থেকেই ক্যাচ মিসের মিছিলে নেমেছেন তারা। প্রথম সেশনের পুরোটাই রাজত্ব করে উইন্ডিজ। দ্বিতীয় সেশনেও সেই রাজত্ব চালিয়ে গেছেন তারা।
শেষ সেশনের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকা এনক্রুমাহ বোনার। কিন্তু পরের বলেই তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। সাজঘরে ফিরে যান ২৪৫ বলে ৮৬ রান করা বোনার। তার বিদায়ে ভাঙে মেয়ার্স-বোনারের ২১৬ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।
ছয় নম্বরে ব্যাট করতে উইকেটে আসেন প্রথম ইনিংসের হাফসেঞ্চুরিয়ান জার্মেইন ব্ল্যাকউড। তখন ম্যাচ জেতার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ৩২ ওভারে ১২০ রান। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণে যান ব্ল্যাকউড। কিন্তু পারেননি বেশিক্ষণ খেলতে। ব্ল্যাকউড এক ছক্কা হাঁকানোর পর তার বিদায়ঘণ্টা বাজান নাঈম। উইকেট ছেড়ে এগিয়ে এসে বড় শট মারতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান ৯ রান করা ব্ল্যাকউড।
এরপর আর বাংলাদেশকে সুযোগ দেয়নি মায়ারস ও জশুয়া ডা সিলভা। তাদের ১০০ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সহজেই ম্যাচের ফল নিশ্চিত করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়ের জন্য তিন রান বাকি থাকতে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ২০ রান করা জশুয়া। এতে অবশ্য জয়ের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি ক্যারিবীয়দের।
চিত্রদেশ//এইচ//