প্রধান সংবাদ

রাজধানীর চারপাশে বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদ-নদীতে বাড়ছে পানি প্রবাহ। ইতিমধ্যে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় ঢুকে পড়েছে বানের পানি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহ্মপুত্র-যমুনার পানি নেমে যুক্ত হচ্ছে পদ্মায়। আর যমুনা-পদ্মার পানি নেমে যুক্ত হচ্ছে মেঘনায়। এ কারণে মধ্যাঞ্চল ও নিম্ন-মধ্যাঞ্চলে দিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই পানি চাপ সৃষ্টি করছে রাজধানীর আশপাশের চার নদীতে।

ইতিমধ্যে ডেমরার কাছে বালু নদীর পানি বিপদসীমা পার করেছে। এতে ওই এলাকায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। তুরাগ এবং টঙ্গী খালে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটারের মধ্যে আছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এই দুটিও বিপৎসীমা পার করতে পারে। তবে বুড়িগঙ্গার পানি বিপৎসীমার বেশ নিচে আছে।

বন্যা ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, মেঘালয় এবং হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমেছে। তবে এখন পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টির পানি আরও অন্তত ২৪ ঘন্টা উজান থেকে আসতে থাকবে। ফলে এই সময়টায় ব্রহ্মপুত্রে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। এরপর অবশ্য ভারী বৃষ্টি না নেই উজানের রাজ্যগুলোতে। কিন্তু তিন-চারদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ফলে বহ্মপুত্র-যমুনার পানি না বাড়লেও নদীর সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। সবমিলে উত্তরের জেলাগুলোতে বিদ্যমান বন্যা অন্তত একসপ্তাহ উন্নতির কোনো আশা নেই।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত বহ্মপুত্র অববাহিকার দেশগুলোতে বৃষ্টিপাত অনেক কমে আসতে পারে। কিন্তু ২৯ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৬৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত দেখা যাচ্ছে। এতে ৩০ জুলাইয়ের পর চতুর্থ দফায় বন্যা শুরু হতে পারে। সাধারণত একদিনে ৩০০ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টি হলে তা অন্তত ১০ দিনব্যাপী বন্যার সৃষ্টি করে। সেই হিসাবে বহ্মপুত্রে জুলাইয়ের শেষে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আগস্টের ১০ থেকে ১৪ তারিখের আগে আমরা সম্ভবত বন্যা মুক্ত হচ্ছি না। তবে পূর্বাঞ্চলে বন্যার ভয়াবহতা কমে আসতে পারে। এর মধ্যে আবার গঙ্গায় শুরু হতে পারে বন্যা। কেননা, শনিবারই ফারাক্কা পয়েন্টে (ভারত অংশে) গঙ্গা বিপদসীমা পার করেছে। এই পানি ধীরে ধীরে রাজশাহী ও কৃষ্টিয়া থেকে নীচের দিকে বন্যা সৃষ্টি করতে পারে।

গত ২৬ জুন থেকে দেশে বন্যা চলছে। পরে ১১ জুলাই দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হয়। আর তৃতীয় দফার বন্যাটি শুরু হয়েছে ২১ জুলাই। পানি ও বন্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বন্যার মূল কারণ দু’টি। এগুলো হচ্ছে, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের পানি। দেশের ভেতরে অতিবৃষ্টিও বন্যার সৃাষ্টি করে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ১৮টি বড় নদী ২৭টি স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, পদ্মা, গঙ্গা, মেঘনা, যমুনা, বহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাগট, করতোয়া, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, কালিগঙ্গা, আড়িয়ালখা, পুরাতন সুরমা, তিতাস।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, এ মুহূর্তে দেশের ৩০টি জেলা বন্যা উপদ্রুত এবং মোট ৩২টি বন্যা কবলিত। জেলাগুলো হচ্ছে-কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ি, ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লালমনিরহাট, নীলফামারি, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেণী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী। এগুলোর সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থিতিশীল আছে। পরের ১৬টিতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।

চিত্রদেশ //এস//

Related Articles

Back to top button