প্রধান সংবাদমুক্তমত

রাগ কখনো ভালো নয় : কানিজ কাদীর

আমাদের পরিবারে, অফিস আদালতে, কর্মস্থলে, সমাজে অনেকেই আমরা তুচ্ছ ব্যাপারে বা কোন সাধারণ ব্যাপারে প্রায়ই উত্তেজিত হয়ে রাগ প্রদর্শন করি। তখন থাকে না কোন পরিস্থিতি, পরিবেশ জ্ঞান। থাকে না কাউকে মান্য করা। স্থান, কাল, পরিবেশ কিছুই মানে না রাগী ব্যক্তি। থাকে না ভাষার কোন কন্ট্রোল। কখনও কখনও অশ্রাব্য, আপত্তিকর গালিগালাজ করে বসে। যার উপর রাগ করে তাকে খুব বাজে ভাবে অপমান করে কথা বলে যেন সে কোন মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। রাগের সময় মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। রাগ করে ভাংচুর, শারিরীক আঘাত, গালিগালাজ, আপত্তিকর শব্দ প্রয়োগ কোনটাই বাদ থাকে না। আবার দেখাযায় এই মানুষগুলো কিছুদিন পর পর ঘরে-বাইরে এই রাগী আচরণগুলো প্রকাশ করার পরও হয়ে যায় একেবারে ভালোমানুষ। যেন তার মত ভাল মানুষই হয়না। বিশেষ করে কিছু পুরুষ ঘরে তাণ্ডবলীলা চালিয়ে বাইরে যেয়ে এত ভাল মানুষ হয়ে যাবে যে কেউ বিশ্বাসই করতে চাইবে না এই ব্যক্তিটাই পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখে।

রাগ কখনোই ভালো জিনিস হতে পারে না। এতে পাস্পরিক সম্পর্ক যেমন নষ্ট হয় তেমনি থাকে না কোন শান্তি। কেউ কেউ আবার এই রাগী মানুষগুলোকে বলে ” রাগী মানুষের মন ভালো হয়।” আমি মনে করি কথাটি একদম ভুল। এতে ঐ রাগী মানুষটিকে আরও প্রশ্রয় দেয়া হয়। যে রাগ মানুষের মন ভেঙ্গে দেয়, কষ্টের আগুন জ্বালায় সেই রাগী মানুষ কি করে ভালো হয়।

রাগের সাথে মনের কোন সম্পর্ক নেই। বরং রাগ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে মানুষকে জানোয়ারের পর্যায়ে নিয়ে যায়। যুগ যুগ ধরে পুরুষ সমাজ গৃহে নানারকম রাগ প্রদর্শন কবে আসছে। এইসব রাগকে পরিবারের সদস্যরা হযম করে নিত। ‘ওনার রাগ একটু বেশি, কিন্তু উনি একজন ভালো মানুষ” এইকথা বলে: পরিবারের সদস্যরা একজনের কুকর্মের দায় রাগের উপর চাপিয়ে যেন স্বস্তি পায়। এই সব রাগী পুরুষগুলো রাগ করে এহেন কর্ম নাই করে না। তারা জিদের বসে ভাংচুর করে , শারিরীক আঘাত, তালাক দেয়, অশ্রাব্য গালিগালাজ করে। কখনো কখনো খুনও করে বসে। তাহলে রাগ কি করে ভালো হলো। রাগী মানুষ ভালো হয়। এই দোহাই দিয়ে সকল আকামকে মানুষই জায়েজ করছে । এই রাগী মানুষগুলোর জন্য পারস্পারিক সম্পর্কগুলো যেন বেঁচে থেকেও মরে যায় ।
রাগী যেই হোক, সে আপনার ঘরের মানুষ হোক অথবা পরিচিতজন হোক তাকে স্পষ্ট করে বলতে হবে রাগ একটা খারাপ জিনিস, বাজে জিনিস, অশ্লীল জিনিস, কোন ভালো গুন নয়। রাগ সবসময় ধ্বংসই ডেকে আনে। তাই পরিবারের মটিভেশন বা সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাহায্য নিয়ে রাগকে কমিয়ে ফেলাই উত্তম কাজ। সবচেয়ে বড় জিনিস নিজের মেডিটেশন, আত্মসচেতনতা ও ইচ্ছা । একজন রাগী মানুষ না রেগে যদি পরিবারের সবার সাথে সুন্দর ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে তাহলে পরিবারও থাকে শান্ত হাসিখুশী। নিজেও থাকে সম্মানের আসনে। সুস্থ, সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। ইগো, অহংকার, ইমোশনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে, পরিবারকে সাহায্য করতে হবে, সবাইকে ভালোবাসতে হবে। অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কিছু কিছু কাজ নিজে করার অভ্যাস করতে হবে। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে।

Related Articles

Back to top button