লাইফস্টাইল

যেসব খাবারে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

ইন হেলথ বা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের উপকার করে এমনকিছু খাবার হলো- ডার্ক চকলেট, তৈলাক্ত মাছ, হাড়ের স্যূপ, বেরি, ব্রোকলি ও ফুলকপি।

কিন্তু এমনও কিছু খাবার রয়েছে যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু পরিণতি হলো- স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মনোযোগ দেয়া কঠিন হয় ও কাজকর্ম করতে সমস্যা হয়। এখানে মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে এমনকিছু খাবারের তালিকা দেয়া হলো।

* ভাজা খাবার: ফ্রাইড চিকেন ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ কেবল পেটের মেঘ বাড়ায় করে না, এগুলো মস্তিষ্কের জন্যও ভালো নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, ভাজা খাবার মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে ও মস্তিষ্কের টিস্যুর সাইজ কমিয়ে কগনিটিভ ফাংশন (জ্ঞানীয় কার্যক্রম) ব্যাহত করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে অথবা মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় অবনতি প্রতিরোধ/বিলম্বিত করতে মাইন্ড ডায়েট অনুসরণ করতে পারেন। মাইন্ড ডায়েটে ভাজা খাবার নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মাইন্ড ডায়েটে রয়েছে এমনকিছু খাবার হলো- বেরি, অলিভ অয়েল, হোল গ্রেনস ও ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার।

* চিনিযুক্ত পানীয়: আপনি সম্ভবত ইতোমধ্যে জেনেছেন যে সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পান করা উচিত নয়। কিন্তু ফ্রুট জুস, এনার্জি ড্রিংকস ও সুইট টি বা চিনিযুক্ত পানীয়ের ব্যাপারেও সচেতন থাকা উচিত। ভাজা খাবারের মতো চিনিও মস্তিষ্কের বন্ধু নয়। আমেরিকার একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সের মুখপাত্র ওয়েসলি ডেলব্রিজ বলেন, ‘উচ্চমাত্রায় চিনি খেলে নিউরোলজিক্যাল ড্যামেজ হয়, কারণ চিনি প্রদাহকে উদ্দীপ্ত করে।’ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন তাদের স্মৃতিশক্তি ও শিখন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই মস্তিষ্কের ক্ষতি এড়াতে চিনিযুক্ত পানীয় সীমিত করার কথা বিবেচনা করতে পারেন।

* পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট: সাদা পাউরুটি, সাদা পাস্তা ও উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে এমন অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার কেবল রক্ত শর্করার মাত্রা বাড়ায় না, এগুলো মস্তিষ্কের জন্যও মন্দ খাবার। ২০১৫ সালে দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত গবেষণায় পাওয়া গেছে, উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার মাসিক চক্রের স্থায়ী সমাপ্তি হয়েছে এমন নারীদের বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অন্যদিকে যেসব নারী বেশি করে ল্যাকটোজ, ফাইবার, ফল ও শাকসবজি খান তাদের বিষণ্নতার ঝুঁকি কমতে পারে। মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা অপ্রক্রিয়াজাত শস্যের খাবার (যেমন- ব্রাউন রাইস ও বার্লি) খাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।

* ডায়েট সোডা: যেহেতু চিনিযুক্ত পানীয় মস্তিষ্কের জন্য ভালো নয়, তাই আপনি হয়তো ভাবছেন যে এর পরিবর্তে ডায়েট সোডা পান করবেন। কিন্তু ২০১৭ সালে স্ট্রোকে প্রকাশিত গবেষণা বলছে যে, ডায়েট সোডা পানকে অভ্যাসে পরিণত করলে ডিমেনশিয়া (স্মৃতিভ্রংশতা) ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষকরা দেখেছেন, গবেষণার যেসব অংশগ্রহণকারী প্রতিদিন ডায়েট সোডা পান করতেন তাদের স্ট্রোক ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি সেসব অংশগ্রহণকারীর তুলনায় তিনগুণ বেশি ছিল যারা পানীয়টিতে অভ্যস্ত ছিলেন না। তাই মস্তিষ্কের সুরক্ষার্থে সকল ধরনের কৃত্রিম মিষ্টি পানীয় সীমিত করার কথা ভাবতে পারেন।

* প্রক্রিয়াজাত মাংস: যারা প্রক্রিয়াজাত মাংস খেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য একটি খারাপ খবর হলো: প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে ডিমেনশিয়া ডেভেলপের ঝুঁকি বাড়ে। ২০২০ সালে এপ্রিলে নিউরোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা এমনটা সাজেস্ট করছে। গবেষণাটিতে কারণ বা প্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখা হয়নি, যারা প্রক্রিয়াজাত মাংস খান তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার হার কেমন তা দেখা হয়েছে। দেখা গেছে, যারা উচ্চ পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস খেতেন তাদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার হার বেশি ছিল। যেসব লোকের ডিমেনশিয়া ছিল না তারা বেশি করে ফল, শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ ও পোলট্রির মাংস খেতেন। সম্ভবত প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে মস্তিষ্কের টিস্যুর সাইজ কমে ও প্রদাহ বাড়ে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

* ফাস্টফুড: বার্গার ও ফ্রাইজে বিদ্যমান উচ্চ মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট আলঝেইমার’স নামক স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়া ফাস্টফুডের উচ্চ মাত্রার লবণ ব্রেইন ফগ সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে স্মৃতিশক্তি ও মনোনিবেশের ক্ষমতা কমে যায়। ফাস্টফুডের মতো লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল সীমিত করতে পারে। এর ফলে ফোকাস/মনোযোগ কমে যায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বা সংগঠিত করার ক্ষমতা হ্রাস পায় ও স্মৃতিশক্তির ক্ষয় হয়, ২০১৬ সালে হাইপোটেনশনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে। তাই মস্তিষ্কের ফাংশন ঠিক রাখতে ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন এবং ডায়েটে গোটা শস্য ও উদ্ভিজ্জ খাবার সংযোজন করুন।

চিত্রদেশ//এলএইচ//

Related Articles

Back to top button