প্রধান সংবাদ

যেভাবে ডক্টরেট ডিগ্রি পান বেনজীর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তবে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়ার প্রোগ্রামে ভর্তির যোগ্যতাই ছিল না তার। শর্ত শিথিল করে তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য স্নাতক ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে শিক্ষাজীবনের সব পাবলিক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। তবে বেনজীরের সে যোগ্যতা ছিল না। ভর্তি ও ডিগ্রি পাওয়ার সময় বেনজীর ছিলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। ভর্তির শর্ত শিথিলের ক্ষেত্রে বেনজীরের পদ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সুপারিশে বেনজীরের ভর্তির ক্ষেত্রে মৌলিক শর্তগুলো শিথিল করা হয়েছিল। শিবলীই ছিলেন বেনজীরের ‘ডক্টরেট’ প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) আগে থেকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রাম চালু ছিল। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ একই প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন পায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০১৪ সালের ২৪ জুন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সভায় বেনজীরের ডিবিএ ডিগ্রির আবেদন গ্রহণ করা হয়। অনুষদটির ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধীনে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে তিনি ডিবিএ প্রোগ্রামে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন ওই প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া নিয়ে ওই সময় র‍্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ থেকে এবং বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন প্রফেসর শিবলী রুবায়েত উল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ডিবিএ প্রথম ব্যাচের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে (রেজি নং-১৩/২০১৪-২০১৫) বেনজীর ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণা মূলত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

বেনজীর আহমেদের ডিবিএ ডিগ্রির আবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৮ সালে তিনি গোপালগঞ্জের এস এম মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে এখনকার এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৮০ সালে সরকারি জগন্নাথ কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে এখনকার এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৮২ সালে বেনজীরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (পাস) ডিগ্রি আছে। বিএ (পাস) সনদ অনুযায়ী, বেনজীর মোট ১ হাজার ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫১৭ পেয়েছেন (৪৭ শতাংশ)। অর্থাৎ, তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। কিন্তু ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি ডিগ্রি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৩০১ নম্বর (৬০ শতাংশ) পেয়েছেন। তার বিএ (পাস) সনদে সাল উল্লেখ করা হয় ১৯৮২। ডিবিএর আবেদনে সাল বলা হয়েছে ১৯৮৩। এই সালের সঙ্গে মিলিয়ে কোনো সনদ জমা দেননি তিনি।

বেনজীর ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সনদ অনুযায়ী, বেনজীর ১৯৮৪ সালে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ২২৯ পেয়ে (প্রায় ৪৬ শতাংশ) দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে স্নাতকোত্তরে উত্তীর্ণ হন। অর্থাৎ তিনি ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। ভর্তির আবেদনে তিনি স্নাতকোত্তরে মোট নম্বর দেখিয়েছেন ৫০০-এর পরিবর্তে ৪০০। মানে হলো, পরীক্ষার মোট নম্বর কম দেখিয়ে তিনি ডক্টরেট প্রোগ্রামে ভর্তির শর্ত পূরণের চেষ্টা করেছিলেন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘৪০ বছর আগে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন, তারা কম নম্বর পেতেন। তারা এখন বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ পদে রয়েছেন। বেনজীরের ক্ষেত্রেও এমনই হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বেনজীরের নম্বর কম থাকার বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে গেছে। কাউন্সিলে তাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বেনজীরের বিষয়টি নিয়ে জানান, ‘ঘটনাটি যে সময়ে ঘটেছে, তখন তিনি উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন না। তাই বিষয়টি সম্পর্কে তার জানা নেই। সাধারণভাবে শর্ত পূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ডক্টরেট প্রোগ্রামে ন্যূনতম নম্বর এবং স্নাতক ডিগ্রি থাকার বাধ্যবাধকতাসহ কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে, যেগুলো শিথিলযোগ্য নয়।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বেনজীরআহমেদের বিরুদ্ধে এখন অনুসন্ধান হচ্ছে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ও অর্থ পাচার বিষয়ে। তবে তথ্য-উপাত্ত পেলে ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়টিও কমিশনের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে আসতে পারে। কমিশন প্রতিবেদন গ্রহণ করলে তা এজাহারভুক্ত হবে।’

 

Related Articles

Back to top button