যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশ হচ্ছে চীন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হচ্ছে চীন। আরটি, গার্ডিয়ান ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সেন্টার ফর ইকনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) নামের যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, ‘বেশকিছু বছর ধরেই চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং ক্ষমতার লড়াই চলে আসলেও করোনা মহামারী ঠিকমত সামাল দিতে না পারায় অর্থনৈতিক দিক থেকে চীন অনেকটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।’
সিইবিআর’র রিপোর্টে বলা হয় , ২০২৮ সালের মধ্যে আর্থিক বৃদ্ধিতে চীন যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যাবে তাই নয় একইভাবে জাপানকে টপকে তিন নম্বরে উঠে আসতে পারে ভারত। সেক্ষেত্রে জাপান চলে যাবে চার নম্বরে। চারে থাকা জার্মানি চলে যাবে পাঁচে এবং পঞ্চম স্থানে থাকা ব্রিটেন ষষ্ঠ স্থানে থাকতে পারে। করোনা মহামারী অর্থনীতিতে এসব দেশগুলোর অবস্থান যেন নতুন করে নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
ব্রিটিশ ওই সংস্থা প্রতিবেদনটিতে ব্যাখ্যা করে বলছে, চীন করোনা পরিস্থিতি দারুণভাবে মোকাবেলা করেছে। দেশটির উহানে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেয়নি। ফলে অর্থনৈতিক গতি শ্লথ হয়নি এবং করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঈর্ষণীয়ভাবে সক্ষম করে তুলতে পেরেছে চীন। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি করোনায়। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক টানাপড়েনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেকটাই বিপরীত।
সমীক্ষা রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৫.৭ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি ঘটবে চীনের। ২০২৬ থেকে ৩০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমলেও, ওই ৪ বছরে অন্তত ৪.৫ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি ঘটবে দেশটির। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বৃদ্ধি প্রতি বছর ১.৯ শতাংশ করে হ্রাস পাবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
করোনা মোকাবিলায় নজর দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছিলো চীন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে আমল দেননি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা গা ছাড়া ভাব দেখায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা বিস্তার অনেক বেড়ে যায়। যা মার্কিন অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং পরিস্থিতি না পাল্টালে আগামী এপ্রিল নাগাদ দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৭ লাখ ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশেন।
অন্যদিকে, করোনা সঙ্কট কাটিয়ে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গতি ফিরে পাবে বলে মনে করা হলেও এই মুহূর্তে দেশটির যে পরিস্থিতি, তাতে ২০২৪ সালের পরও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বৃদ্ধি প্রতিবছর ১.৬ শতাংশ করে হ্রাস পেতে পারে। জাপানের সেন্টার ফর ইকনমিক রিসার্চ ডিসেম্বরের শুরুতে জানিয়েছিল, ২০২৮ অথবা ’২৯ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে চীন। এমনকি ২০২৩ সালের মধ্যে চীন উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং গত মাসে জানান, তার দেশের অর্থনীতির আকার আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে। যাকে তিনি ১৫ বছরে ‘মডার্ন সোশিয়ালিজম’ অভিহিত করে তা অর্জন করতে চাচ্ছেন।
এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির বৃদ্ধি দিকে পশ্চিমা অর্থনীতির দেশগুলোর নজর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ব্রিটিশ সংস্থার ওই সমীক্ষা রিপোর্টে। সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ বলছে এক বছর আগে তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী এশিয়ার দেশগুলোতে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি বরং আধা দশক আগেই অর্জিত হবে। এ বছরেই চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে অথচ মার্কিন অর্থনীতি সঙ্কুচিত হবে একই বছর ৫ শতাংশ। বিশ্ব অর্থনীতি এবছর হ্রাস পাবে ৪.৪ শতাংশ।
সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চের ডেপুটি চেয়ারম্যান ডগলাস ম্যাকউইলিয়াম বলেন, ২০২০-২৫ সালের চীনা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাই দেশটিকে উচ্চ আয়ের দেশে নিয়ে যাবে। সহজভাবে এশিয়ার দেশগুলোকে বিবেচনার পরিবর্তে ডগলাস গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন। বিশ্ব জিডিপি’তে চীনের শেয়ার ২০০০ সালে ছিল ৩.৬ শতাংশ যা গত বছর বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭.৮ শতাংশে।
২০২৩ সালে চীনের মাথা পিছু আয় দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৩৬ ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় চীনে জীবন যাত্রার মান এখনো অনেক নিচুতে। যুক্তরাষ্ট্রে মাথা পিছু গড় আয় ৬৩ হাজার ডলার এবং ব্রিটেনে তা ৩৯ হাজার ডলার। আগামী ১৫ বছরে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না ইউরোপ। ব্রিটেনের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে আগামী ৫ বছরে তা ১.৮ শতাংশ হারে নেমে আসবে। পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালে ব্রিটেনের অর্থনীতি ভারতের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে।
মার্কিন ডলারের তুলনায় ব্রিটেনের জিডিপি ফ্রান্সের চেয়ে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গত বছরে ভারত অর্থনীতির আকারে ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে অতিক্রম করে। কিন্তু রুপির ব্যাপক অবমূল্যায়ন হওয়ায় এ অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে ২০৩৫ সাল নাগাদ ভারতের বিশ্বে তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ আরো বলছে আগামী ১৫ বছর অর্থনীতির সূচক ওঠানামা করবে পরিবেশ পরিস্থিতি ও উষ্ণতা বৃদ্ধি ওপর ভিত্তি করে।
আগামী ২০৩৫ সাল নাগাদ সমুদ্রের উচ্চতা ২০০০ সালের চাইতে ৪৫ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে। দুই বছর আগে ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্রের উচ্চতা ২০ সেন্টিমার বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কার্বন মুক্ত অর্থনীতির পরিকল্পনা নিয়ে অনেক দেশ অগ্রসর হচ্ছে এবং এতে জীবাশ্ম জালানি ও তেলের চাহিদা ব্যাপক হ্রাস পাবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলারে নামলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
চিত্রদেশ//এফ//এল//