প্রধান সংবাদমুক্তমত

‘মৃত্যু ভাবনা’

কানিজ কাদীর

আমরা কেন এত কিছু করছি আমরা নিজেরাও জানিনা । জীবন সাজানোর জন্য কত আয়োজন! ভালভাবে থাকতে হবে। কত রকমের আসবাবপত্র লাগবে। সুন্দর বিছানা লাগবে। নানা রংয়ের শাড়ি, গয়না, কসমেটিক্স, শার্ট, প্যান্ট, জুতা, আরও কত কি না হলে তা নিজের যেন দামই থাকে না। কত আফসোস ভাল কাপড়, গয়না সাজগোজের জন্য। কি লাভ এসব করে। তবু মানুষ করে। এ নশ্বর পৃথিবীটাকে মানুষ খুব ভালোবাসে। এর প্রতি এত মায়া কেন! পরিবার পরিজন রেখে তো একাই চলে যেতে হয়।

গতকাল ছোট মামা মারা গেছেন। উনাকে মানে উনার মৃতদেহকে দেখতে গেলাম। যেয়ে দেখি উনার মৃত দেহটা চাঁদরে ঢাকা। উনার কাছে কেউ নেই। করোনার জন্য কারও কোন বসার ও ব্যবস্থা নেই। কবরে যাবার আগেই মৃতদেহটা কত একা! উনার ছেলেরা হাসপাতালের যাবতীয় টাকা পয়সা লেনদেনও মৃত্যু সার্টিফিকেটের জন্য গেছে। কেবিনে বসার জায়গা নেই। মামী ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন নয় তলায় বসে আছে। মামার মুখটা খুলে আমরা নিজেরা্ই দেখলাম। ডা:মনজুরুল হক সাহেবই চাদরটা মুখ থেক সরালেন। আমি মৃতদেহের মুখটা দেখলাম। আমার ভেতরটা কেঁপে উঠল। মামার অনেক স্মৃতি মনে পড়লো। ছোট বেলায় মামার আদরগুলো , মজাগুলো চোখে ভেঁসে উঠলো । আমার চোখ আপনি আপনি ভিজে উঠলো। হায়রে..জীবন! এ জীবন কিসের জন্য । কিসের এত দম্ভ, ঝগড়াঝাটি, রাগ,কষ্ট, এত বাড়াবাড়ি? প্রভাব ,প্রতিপত্তি, ছেলে-মেয়ের প্রতিষ্ঠা, বাড়ি-গাড়ি আর প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম এই তো জীবন। কিন্তু এসব করেও কি মানুষ শান্তি পায়? না পায় না। অনবরত মনের ভেতর চলে হাহাকার। এ সন্তান-সন্তিত, ধনসম্পত্তি এ সবের কিছুই তো মানুষ নিয়ে যেতে পারে না। তবে কেন এত আয়োজন? কিসের তবে? কার জন্য? শুধু একটু আশা নিজেকে সবার মনে স্থান করে যাওয়া এইতো। কিন্তু সেটাও তো খুব কঠিন। আর তাতেই বা কি লাভ! এ দু’দিনের দুনিয়া একটা সাময়িক রঙ্গমঞ্চ ছাড়া আর কিছু না। আমরা প্রতিনিয়ত মহান আল্লাহ তায়ালার দয়ায়ই বেঁচে আছি। মহান রাব্বুল আলামীনের নাম আমাদের অন্তরে সবসময়ই রাখা উচিত। আর মানুষের মনে বেঁচে থাকতে হলে ভাল কাজ, মানুষের জন্য যা উপকারী তা করে যেতেই হবে। কারণ যতদিন পৃথিবীতে মানুষ বাচেঁ কাজ নিয়েই বাঁচে। তাই অসহায় মানুষকে ভালবাসতে হবে আর সৎ কাজ নিয়েই আমাদের জীবনকে কর্মবহুল করে রাখতে হবে।

Related Articles

Back to top button