ভোরের আলোতেও জ্বলছে আগুন, অসহায় ফায়ার সার্ভিস
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
একের পর এক বোমার মতো কন্টেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে। শনিবার রাত ১১টার দিকে লাগা আগুন প্রায় ৭ ঘণ্টা পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো কেমিকেলপূর্ণ কনটেইনারে বিস্ফোরণ, পানি স্বল্পতাসহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছে ফায়ার সার্ভিস। পরে রোববার ভোররাত প্রায় ৪টার দিকে আগুন নেভানোর কাজ আপাতত স্থগিত করেন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ডিপো এলাকায় পানির স্বল্পতা রয়েছে। কনটেইনারের কাছাকাছি যেয়ে আগুন নেভানোও যাচ্ছে না। দূর থেকে পাইপ দিয়ে পানি দেয়া হচ্ছে। শুরুতে কাছাকাছি গিয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল বাহিনীর ১০ জনের বেশি সদস্য আহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যেভাবে বিস্ফোরণ হচ্ছে তাতে কারো পক্ষে ভেতরে থাকা সম্ভব নয়। এজন্য ডিপোর মেইনগেটে চলে এসেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, প্রায় ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ একের পর এক বোমার মতো কনটেইনার বিস্ফোরিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম আমরা। কিন্তু হঠাৎ করে ৭-৮ টি কনটেইনারে বিস্ফোরণে হয়ে আবার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কনটেইনারে কেমিক্যাল ছিল। সেই কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কনটেইনারের কাছাকাছি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রায় দশজনের বেশি আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগুন নেভাতে পানির স্বল্পতার কথাও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আর জানান, ডিপো এলাকায় পানির সংকট রয়েছে। সেখানে একটি পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছিল, সেই পানিও প্রায় শেষ।
আগুনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে রোববার সকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ব্রিফ করবেন বলেও জানানো হয় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।
এদিকে আগুনে দগ্ধ ও আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসকার্য চালিয়তে যাওয়া হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জন নিহত হওয়ার খবরও জানা গেছে।
আহতদের আহাজারিতে ক্রমশই ভারী হয়ে উঠছে চমেকের বাতাস। মেডিকেলে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রেড ক্রিসেন্ট আর পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে।
এদিকে মেডিকেলে আসা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে চট্টগ্রামে অবস্থান সকল সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে একে একে আনা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে টেম্পু বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে করেও হতাহতদের আনা হচ্ছে মেডিকেলে। আহত সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। আহতদের চিকিৎসায় সকল চিকিৎসককে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা শুধুমাত্র অ্যাপ্রোন পরেই চলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চলে আসুন।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সকল চট্টগ্রাম মেডিকেলের ইন্টার্ন চিকিৎসককেও কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
চিত্রদেশ//এফটি//