বাড়ছে মানুষের জটলা, আতঙ্কে রাজধানীবাসী
স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী ১০ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানী শপিং মলগুলো খোলার ঘোষণা এসেছে। এর মধ্যেই বদলে যেতে শুরু করেছে রাজধানীর লকডাউনের চিত্র। হাজার হাজার মানুষ এখন রাস্তায় নেমে পড়ছে। রাজধানীর বাইরে থেকেও প্রবেশ করছে সাধারণ মানুষ। প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজারের বাইরেও নিত্যপণ্যের দোকান খুলে ফেলছে অনেকেই।
তবে এ বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজধানীবাসী। তারা বলছে, মহামারী একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পুরান ঢাকার উর্দু রোডের বাসিন্দা সঙ্গীত আহমেদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছি। ঈদকে ঘিরে আমাদের কাপড় বিক্রির ধুম পড়ে যায়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সরকারি ঈদকে ঘিরে কাপড়ের দোকান খোলার অনুমতি দিতে যাচ্ছে। তারপরেও আমরা নিজ ইচ্ছায় দোকান বন্ধ রাখবো। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে রাজধানীর বেশকিছু নিত্যপণ্যের দোকান খুলতে শুরু করে দিয়েছে। বেশকিছু সড়কে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পরে লকডাউন করে দেয়া হয়েছিল সেগুলো এখন খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এখনো সুস্থ হয়নি। এতে আশেপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যেই বাস করছেন।
এদিকে অধিকাংশ চেকপোস্টে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ঢাকার এসব প্রবেশ মুখ দিয়ে অবাধে মানুষ প্রবেশ করছে। তবে সরকার চেয়েছিল রাজধানীর বাইরের কেউ যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে।
একাধিক শিল্প কারখানার মালিক আবুল কাশেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা চালু করতে না পারলেও মজুদকৃত মালামাল বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম। এজন্য একটা প্রস্তুতিও ছিল কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনভাবেই সাহস পাচ্ছি না। এছাড়াও সারাদেশ থেকে দোকানিদের মধ্যে খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুস সাদেক বলেন, গত দুই মাস ধরে পরিবারের কারো সাথে দেখা করতে পারি না। নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই তবে সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় চাইলেও কোন জায়গায় পাঠিয়ে দিতে পারছি না। আবার আমাকেও কাজে আসতে হচ্ছে। চাইলেও তো আর এই কাজ ছেড়ে যেতে পারি না। তবে সাধারণ মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে পড়ছে তাতে মনে হচ্ছে সামনে আরো পরিস্থিতি খারাপ হবে।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এই সময়ে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১৫০ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন পাঁচ জন। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১২০০ জন। এর মধ্যে চিকিৎসক ৫৭৪ জন। মারা গেছেন ২ জন।
চিত্রদেশ//এস//