বাংলাদেশে করোনার ‘স্বতন্ত্র ৫ রূপ’
স্টাফ রিপোর্টার:
মহামারী করোনার সংক্রমণ, মিউটেশনের হার, জিনগত বৈশিষ্ট্য গবেষণা করে দেশে পাঁচ ধরনের স্বতন্ত্র করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সংক্রামক এই ভাইরাসটির এমন পাঁচ রূপ বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রোববার বিসিএসআইআর মিলনায়তনে এ সংক্রান্ত এক সভায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ জানান, বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে এর পরিবর্তনের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।
ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ, মিউটেশনের হার, জিনগত বৈশিষ্ট্য, নন-সিনোনিমাস মিউটেশন এবং জেনোমিক ফাইলোজেনি পর্যবেক্ষণ করে পাঁচ ধরনের স্বতন্ত্র করোনার (কোভিড-১৯) অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি।’
বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান জানান, নভেল করোনাভাইরাস জিনগত বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করার জন্য সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সর্বমোট ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়। এ নমুনা চলতি বছরের ৭ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়।
নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে আন্তর্জাতিক ডাটাবেজ গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাতে (জিআইএসএআইডি) প্রকাশ করা হবে বলেও সভায় জানানো হয়েছে।
বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের উৎস, গতি প্রকৃতি ও বিস্তার নির্ণয়ের পাশাপাশি এ ভাইরাসের ওষুধ ও ভ্যাকসিনের ওপর গবেষণা করছেন।’
‘বাংলাদেশেও আটটি বিভাগের সর্বমোট ৩০০টি ভাইরাস সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একইসঙ্গে চীন, ইউএসএ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি কোভিড-১৯ টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংগৃহীত নমুনায় শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্যকারী ভ্যারিয়েন্টের G 414 (স্পাইক রুটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক গ্লাইসিন হওয়ার কারণ) উপস্থিতি পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত ২৬৩টি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের মধ্যে ২৪৩টি জিআর ক্লেড, ১৬টি জি ক্লেড এবং ১টি ও ক্লেডের অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২৬৩টি সার্স-কোভ-২ জিনোম বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সর্বমোট ৭৩৭টি পয়েন্টে মিউটেশন হয়। যার মধ্যে ৩৫৮টি নন সিনোনিমাস অ্যামিনো অ্যাসিড প্রতিস্থাপন ঘটায়। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ২৬৩টি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের মিউটেশনের হার বার্ষিক ২৪ দশমিক ৬৪ নিউক্লিওটাইড। সারাবিশ্বে নমুনা প্রতি মিউটেশন হার ৭ দশমিক ২৩। যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬০ লক্ষ্য করা যায়।
অর্থাৎ অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে এর রূপ পরিবর্তন করছে। স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিউক্লিওটাইড মিউটেশনের মধ্যে ৫৩টি নন সিনোনিমাস অ্যামোনিয়া বেশি প্রতিস্থাপন ঘটে, যার মধ্যে পাঁচটি স্বতন্ত্র। যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি। সংগৃহীত নমুনা সময়ের মধ্যে ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে চারটি মিউটেশনের পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়।
সভায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও বিসিএসআইআর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
চিত্রদেশ //এল//