বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, নতুন এলাকা প্লাবিত
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জে মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে গোপালগঞ্জের সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার ১৫টি গ্রামের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী, কাফুলাবাড়ী এবং রামনগর গ্রাম। এতে ১৮ টি গ্রামের ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
জানাগেছে, জেলার মধুমতি নদী ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার উলপুর, নিজড়া, হরিদাসপুর, কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা, হাতিয়াড়া, পুইশুর, মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী, কাফুলাবাড়ী এবং রামনগর গ্রামের চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পানিবন্দী এলাকার অন্তত ৫শ পরিবার প্লাবিত এলাকার স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পাকা সড়কের পাশে উঁচু জায়গায় কুঁড়ে ঘর বানিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ও আধা পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দূরাবস্থার মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যে শত শত মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ওই সব ঘের মালিকেরা নেট দিয়ে মাছ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, মধুমতি নদী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও বিলরুট চ্যানেলের বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তারপরেও জেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকা কলাবাড়ী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের লক্ষ্মী বালা, রেখা রানী বাগচী, কুমরিয়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, আমারা পানিবন্দী অবস্থায় আছি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি। বন্যার পানিতে আমার মাছের ঘেরের সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। আমি এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে বাঁচব ভেবে পাচ্ছি না।
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা জানিয়েছেন, কলাবাড়ী ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম নতুন করে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে চার শতাধক পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মধুসদি ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমার প্রতিদিনই বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ টি পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আগামীতে অন্য ক্ষতিগ্রস্তদেরও সাহায্য করা হবে। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর উপজেলার বন্যায় ক্ষয়গ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে প্লাস্টিকের পানির ক্যান ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগকে মেডিকেল টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ৩শ’ মেট্রিক টন চাল এবং শিশু, গো-খাদ্য ও শুকনা খাবারের জন্য ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
চিত্রদেশ//এফ//