ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশে ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৬ সালে তা ডিসেম্বর মাসে শুরু হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নে বিরতিসহ ৫ ঘণ্টা পরীক্ষা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) নতুন কারিকুলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, স্কুলের বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক (ষান্মাষিক) মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সাতটি ধাপ বা স্কেলে শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে নতুন কারিকুলাম নিয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি। সেখানে এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ডিসেম্বরে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলামে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ওপর ভিত্তি করে এসএসসি পরীক্ষা হবে। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী পরীক্ষার লিখিত মূল্যায়নে ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নে ৩৫ শতাংশ থাকবে। আগামী ৩১ মে’র মধ্যে পরীক্ষা পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে। তবে ওই পরীক্ষার নাম এসএসসি থাকবে নাকি অন্য কোনো নাম হবে, সেই বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়নি। সবকিছু চূড়ান্ত করতে চলতি মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি বৈঠক ডেকেছে মন্ত্রণালয়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। আরেকটি বৈঠকের চূড়ান্ত হওয়ার পর দ্রুত সবাইকে এসব বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। আগামী ২৭ মে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত হতে পারে নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পদ্ধতি।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘বছরের শেষে নিলে শিক্ষার্থী শিক্ষাবর্ষ পুরোপুরি ব্যবহার করা যাবে। এসব বিবেচনায় ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এসএসসি পরীক্ষা ডিসেম্বর নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। চলতি মাসের বেঠকে তা চূড়ান্ত হতে পারে।
এসএসসি পরীক্ষা ৫ ঘণ্টা
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তৈরি করা ‘২০২৫ এর দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক মূল্যায়ন পরীক্ষা’সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বর্তমান শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও সমমান পরীক্ষা (এসএসসি) তিন ঘণ্টার হলেও আগামী বছর থেকে পরিবর্তন আসছে এ ধারায়। ২০২৬ সালে এ পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী। এতে মোট ১০টি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে পাঁচ ঘণ্টায়। দীর্ঘ এ সময়টা পরীক্ষার হলেই অবস্থান করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। অবশ্য মাঝে বিরতি পাবেন তারা।
আগামী বছর দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা মোট ১০টি বিষয় পড়বে। বিষয়গুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। এই পাঠ্যসূচির ওপরই অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। বিষয়ের চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকল্পভিত্তিক কাজ, সমস্যা সমাধান, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে পরীক্ষার্থীদের। মূল্যায়নে অনুসন্ধান, প্রদর্শন, মডেল তৈরি, উপস্থাপন, পরীক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয় থাকবে।
এ ছাড়া নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সার্বিক আয়োজনের জন্য বিষয়ভিত্তিক ৬০০ শিক্ষকের সমন্বয়ে রিসোর্সপুল গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিটিবির। সূত্র বলছে, রিসোর্সপুলকে প্রথমে বোর্ডের আয়োজনে এনসিটিবির বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিটির জন্য প্রতি বিষয়ে ৪ জন করে মোট ৪৪ জন শিক্ষককে চূড়ান্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।