
ফেনীতে নদীভাঙন ও প্লাবনে শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন
ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনীতে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভাঙা স্থান দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চলগুলো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, পরশুরাম উপজেলায় ১২টি এবং ফুলগাজী উপজেলায় ৯টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় ইতোমধ্যে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নদীকূলের সড়কটি সংস্কারের অভাবে প্রতিবছরই বর্ষায় প্লাবিত হই। এবারো ১০টির বেশি গ্রাম ডুবে গেছে।’
পাঠাননগরের আরেক বাসিন্দা জানান, ‘পরশুরাম-ফুলগাজীর ভাঙন স্থান দিয়ে পানি এসে ছাগলনাইয়াও প্লাবিত হচ্ছে। সড়ক ডুবে থাকায় যানচলাচল বন্ধ। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া এলাকার আজগর আলী বলেন, ‘গলা সমান পানিতে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছি। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না। এখনো প্রশাসনিক কোনো সহায়তা পাইনি।’
আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবারও হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।’
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, ‘দুর্গতদের সহায়তায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। উপজেলার ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রাখা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চার উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৭ হাজার মানুষ। ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে।