পরিচালক রাজের কোনো লেখাপড়া নেই, সে একজন মূর্খ: ডিবি
স্টাফ রিপোর্টার:
পরীমনি কাণ্ডে অভিযুক্ত বিতর্কিত পরিচালক নজরুল ইসলাম রাজের কোনো লেখাপড়া নেই। তিনি একজন মূর্খ মানুষ। অন্ধকার পথে কিছু তথাকথিত মডেলদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মানুষকে মনোরঞ্জন করাতেন এ চলচ্চিত্র পরিচালক।
ডিবির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ের সামনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজ অন্ধকার পথে কিছু তথাকথিত মডেলদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মানুষকে মনোরঞ্জন করাতেন। তার আজকে অঢেল সম্পত্তি। অথচ তার কোনো পড়ালেখাই নাই। ঢাকায় এসে নিম্ন শ্রেণির চাকরি করতেন রাজ। কিন্তু এই মডেল ও মাদক সাপ্লাই দিয়ে তিনি তার অবস্থান তৈরি করেছেন। এটার জন্য দায়ী এই সমাজের কিছু খারাপ প্রকৃতির মানুষ। সেসব মানুষের নাম রাজ বলেছে। আমরা রাজকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারা তার এসব পার্টিতে আসত, কাদের মডেল-মাদক সাপ্লাই দিত এসব বিষয়ে আরো তথ্য বের করব।
রাজের পার্টিতে কারা আসত সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, রাজ আমাদের কিছু নাম বলেছেন- যাদের তিনি বিভিন্ন মডেল সাপ্লাই দিতেন। যেহেতু জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে, সেহেতু তিনি আমাদের কাছে আরও কিছু তথ্য দেবেন। সেসব মানুষের নাম আমরা পরে বলতে পারব। তবে উচ্চ মধ্যবিত্ত বা বড় লোকের সন্তানদের নিয়ে এ কাজগুলো করতেন তিনি। মূলত ঘরোয়া পার্টিতে এসব হতো।সবার নামই নোট করেছি। তদন্তের পর পরবর্তীতে আপনাদের সামনে তা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে মাদকদ্রব্য ও বিকৃত যৌনাচার এবং পর্নোগ্রাফির সরঞ্জামসহ রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গ্রেপ্তার রাজকে চার দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির মধ্যে মানুষ যখন মৌলিক চাহিদা পূরণে দিশেহারা, তখনও দেশের চিত্রজগতের কতিপয় মডেল-অভিনেত্রী নিয়ে ফ্ল্যাটে বসত মাদকের জমজমাট আস। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন ফ্ল্যাটে ডিজে পার্টির আসরে রাতভর আড্ডা জমত। সেখানে মদ, ইয়াবা, আইস আর সিসার মতো মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন তারা। সেসব পার্টিতে যাতায়াত ছিল প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও অভিজাত পরিবারের লোকজনের।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে অবশেষে ধরা পড়লেন এই চক্রটির বেশ কয়েকজন মডেল-অভিনেত্রী। আর তখনই বেরিয়ে এলো এই চক্রের মূল হোতা ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র কর্ণধার নজরুল ইসলাম রাজের কথা।
ঢাকাই সিনেমার আলেচিত অভিনেত্রী পরীমনি গ্রেপ্তারের পর রাজ ও তার কথিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলছে।
এর আগে রাজের উত্থানের পেছনের ইতিহাস জানাতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, রাজ গ্রেফতার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানের সহযোগিতায় ১০-১২জন তরুণী নিয়ে একটি অপরাধচক্র তৈরি করে। এই চক্রটি গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টির আয়োজন করত। এসব পার্টিতে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম সংঘটিত হতো। এসব পার্টিতে অংশগ্রহণকারীদের থেকে বিভিন্নভাবে মোটা অংকের অর্থ সংগ্রহ করা হতো। এরইমাধ্যমে রাজসহ এই চক্রের সদস্যরা রাতারাতি বিপুল পরিমান অর্থের মালিক বনে যান।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে বনানীর জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৪২ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় একটি ফ্ল্যাটে ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খোলেন নজরুল ইসলাম রাজ। মাসিক ৫৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অফিসটি উদ্বোধন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ অনেক রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
আর সেই ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’র অফিসেই ছিল যত অনৈতিক কাজের আখড়া। দিনভর ‘সুন্দরীদের’ আনাগোনা ছিল সেখানে।
৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’অফিসের অবৈধ কর্মকাণ্ড বিষয়ে জানিয়েও লাভ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪২ নম্বর বাড়িতে বসবাসকারী একজন এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন গণমাধ্যমকে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ৫ম তলায় নারী-পুরুষ প্রবেশ করতেন। অনেক সময় গভীর রাতেও তারা আসতেন। তারা দীর্ঘ সময় এ ফ্ল্যাটে অবস্থান করতেন। ভেতর থেকে অনেক সময় নারীদের চিৎকার শোনা যেত। তবে ভেতরে কী হচ্ছে তা জানা যেত না। জানতে চাইলেও কিছু বলা হতো না। উল্টো ভয়ভীতি দেখানো হতো। এ কারণে পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের মালিকরা মিলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশ ডেকে তাদের সতর্ক করা হলেও সেসব বন্ধ হয়নি।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে গ্রেপ্তার পরীমনির তথ্যমতো র্যাব অভিযান চালিয়ে রাজকে আটক করে।ওই সময় তার ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’ বাসায় মাদকসহ পর্নোগ্রাফি ও বিকৃত যৌনাচারের বিভিন্ন আলামত এবং সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটকের পর তাকে র্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে বনানী থানায় রাজকে হস্তান্তর করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র্যাব।
চিত্রদেশ//এফটি//