প্রতিটা নারীই তো স্বপ্ন দেখে যে সে নিজে কিছু একটা করবে। যেখানে কিনা তাকে সবাই সম্মান করবে। এই মাইন্ডসেট থেকেই কিন্তু নারীদের কিছু একটা করা। চাকরি করলে তো অন্যের অধীনে কাজ করতে হয়। আর নিজে কিছু করলে সেখানে নিজের চিন্তা চেতনার প্রতি ফলন ঘটানো যায়। নিজের মেধার বিকাশেয়গা হয়। তো নিজে আত্মনির্ভশীল এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ভাবনা থেকেই বস্ত্র ও পাট নিয়ে কাজ করা শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা সানজিদার একট জা খানম। বস্ত্র নিয়ে ‘এসএন্ডএফ ফ্যাশন’ আর পাট নিয়ে ‘এসএন্ডএফ জুট এন্ড ক্রাফট’ এর মাধ্যমে কাজ করেন তিনি। সানজিদা আর তার ছোট বোন ফাহমিদা মিলে ২০১৪ সালে এসএন্ডএফ ফ্যাশন ও জুটের বিজনেস শুরু করেন।
ছোটবেলা থেকেই খুব ব্যক্তি স্বাধীনাই বিশ্বাসী ছিলেন সানজিদা খানম। তার বাবা ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনভাবে বড় হওয়ার পরিবেশ করে দিয়েছেন। সেভাবেই বেড়ে ওঠা । বিএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট থেকে এইচএসসি, জগন্নাথ ও ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেন তিনি।
“একটা কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ফরেন এডুকেশন কানসালটেন্সি ফার্মের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। ওরা বিদেশে স্টুডেন্ট পাঠাতো যেহেতেু আমি ইংলিশের স্টুডেন্ট । ইংলিশটা ভালো বুঝি। তাই ওরা আমাকে জবের অফার দিল। পরে সেখানেই পার্টটাইম জব করা শুরু করি আমি’ বললেন সানজিদা।
তিনি বলেন. ‘পরবর্তীতে আমি নিজেই বনানীতে একটা ফরেন এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্ম চালু করি। নামছিল ‘কনফিডেন্ট’।
সানজিদা খানম বলেন, ‘এই বিজনেসটা আমি শুরু করেছি একটা উদ্দেশ্য থেকে । সেটা হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে পড়াশোনা করে যে সাফার আমরা করেছি, সেটা যেন কাউকে আর না করতে হয় । যেকোন স্টুডেন্ট যেন ইন্টারমিডিয়েট পাস করে লিগ্যাল ওয়েতে বিদেশের যে কোন কান্ট্রি তো গ্রাজুয়েশন করতে পারে। সেজন্য এডুকেশন সেক্টরে একেবারে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম আমি। এমনকি সফলতার সঙ্গেই ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অনেক শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠিয়েছি। তবে এই সেক্টরে বিজনেস করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি এই বিজেেনসে অর্থনৈতিক সাপোর্টটা অনেক শক্তিশালী হওয়া লাগে। এছাড়া জনবল ও অনেক বেশি লাগে। তো সবকিছু মিলিয়ে বিজনেসটা আর চালু রাখতে পারিনি। আসলে স্বপ্নছিল একট ইন্সটিটিউট করবো। কিন্তু সেই সাপোর্টটা আর পাইনি।’
তিনি আরো বলেন , ‘যাই হোক। এরপর বিয়ে, সন্তান হলো। তখন আমি কিছু করিনা । আমার প্রচুর সময়। ভাবলাম আবার কিছ ুকরা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই বিজনেস রিলেটেড কিছু প্রশিক্ষণ নিলাম। যেমন- এক্সপোর্ট, এন্টারপ্রেনার, প্রোডাক্ট, টেকনিক, ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমার হ্যান্ড যেখানে আমি সেখানেই থাকবো। আমি সারভাইভ করতে পারবো। ফল করবোনা। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট নিয়ে কজ করবো যেটা সবসময়ই চলবে।’
সানজিদা বলেন, এছাড়া বিসিক থেকেও ব্লক, বাটিকের ওপর ট্রেনিং নিয়েছি। জুটের ট্রেনিং নিয়েছি এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে। আমি জেডিপিসির মেম্বার। জাতীয় মহিলা সংস্থা থেকে আমি ডিজাইনের ওপর ট্রেনিং নিয়েছি। ‘এস এন্ড এফ’ এর সব প্রোডাক্টই আমার ডিজাইন করা। এসব ট্রেনিং নেয়ার পর ভাবলাম এখনতো আমি অনেকটা কাজ শিখেছি। সর্বপ্রথম আমি বিসিকের মেলাতেই অংশগ্রহণ করি। চিন্তা করলাম ইন্ডিভিজুয়ালি কিছুনা করে মেলা গুলোতেই অংশগ্রহণ করি। রিস্ক ফ্রি বিজনেস করি।
এ পর্যন্ত কয়টি মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে , সানজিদা বলেন, -এ পর্যন্ত দেশের বাইরে ইন্ডিয়াতে দুটা মেলায় গিয়েছি। ঢাকার বাইরেও অংশগ্রহণ করেছি। দেশের মধ্যে বিসিকের মেলাগুলেতো অংশ গ্রহণ করি নিয়মিত। এসএমই ফাউন্ডেশনের মেলায় ও অংশ নিয়েছি।
সেক্ষেত্রে মেলাগুলোয় কেমন সাড়া পান? ‘হিউজ সাড়া পাই। আমার প্রোডাক্ট যে মানুষ কিনছে। পছন্দ করছে আমি এজ এ ডিজাইনার বা প্রোপাইটর হিসেবে মানুষ যে আমাকে পছন্দ করছে। সম্মান করছে একটা বিজনেস রানিং করতে তো এটাই সবচেয়ে বড় বিষয় বলে আমার মনে হয় বললেন’ সানজিদা খানম।
তিনি বলেন, আমি এখন দুভাবেই কাজকরি। একটা হচ্ছো লোকালি জুটের হ্যান্ডব্যাগ, মোবাইল ব্যাগ, শপিংব্যাগ, পার্স , লেডিস ব্যাগ, অফিসিয়াল ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ প্রভৃতি তৈরি করি। বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজের সেমিনার, গিফট টাইটেম প্রভৃতির কাজ করি।
আপনাদের প্রোডাক্টের বৈশিষ্ট্য কী? সে প্রশ্নের জবাবে সানজিদা খানম বলেন, ‘ মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমি প্রোডাক্ট তৈরি করি। আমাদের সব প্রোডক্টাই নিজস্ব তৈরি। আমার মূল লক্ষ্যই হলো প্রোডাক্টের অর্ডার নেয়া। যেমন-অনলাইন মার্কেটিংয়ে-এখানেই ডটকম, বিক্রি ডটকম, কেনাবেচা ডটকম প্রভৃতির মাধ্যমে আমি অর্ডার নিয়ে থাকি।’
‘এস এন্ড এফ’ নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে সানজিদা জানান, আমার ভবিষৎ পরিকল্পণা হলো আমাদের এসএন্ডএফ প্রোডাক্টগুলো যেন দেশ-বিদেশে পরিচিতি পায়। একইসঙ্গে আমি আন্তর্জাতিক এক্সিজিবিশনে অংশ গ্রহণ করতে চাই । আমাদের দেশী প্রোডাক্টগুলোকে বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে চাই।
নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মানুষ মাত্রই তাকে স্বাবলম্বী হওয়া দরকার। সে ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক। ছেলেরা যখন স্বাবলম্বী হয় তখন তাকে সবাই রেসপেক্ট তার কথাশুনে। একটা মেয়েও যখন স্বাবলম্বী হবে তখন তাকে সবাই রেসপেক্ট করবে। কথার মূল্য দিবে। নারীদেরকে দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে। লক্ষ্য স্থির থাকতে হবে তাহলে যেকোন নারীই সফলতার সাথে স্বাবলম্বী হতে পারবে। আমার মতে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরি। পারিপার্শ্বিক সাপোর্ট না থাকলেও নিজেকে নিজের মত আগাতে হবে। কারণ হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাপোর্ট কেউ করবেনা। তাই বলে থেমে থাকা চলবেনা। ’
চিত্রদেশ//এস//