নববর্ষ বরণে প্রস্তুত চারুকলা, চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ
স্টাফ রিপোর্টার:
দরজায় কড়া নাড়ছে ১৪২৯। চৈত্রের শেষ দুটো দিন গড়ালেই নববর্ষ। ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’—বিখ্যাত সংগীত পরিচালক রজনীকান্ত সেনের লেখা গানের এই অংশটুকু মূল প্রতিপাদ্য করে বরণ করে নেয়া হবে নববর্ষ ১৪২৯-কে। দীর্ঘ দুই বছরের করোনার প্রকোপ ও স্থবিরতা কাটিয়ে নববর্ষ মঙ্গলময় হওয়ার প্রত্যাশায় এই প্রতিপাদ্য। এদিকে বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে নতুন রূপে ঝলমলে চারুকলা। পুরোদমে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
নববর্ষের একটি মূল আয়োজন হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়। প্রতিবছর এই দিনটিকে ঘিরে থাকে বিশাল আয়োজন। তবে করোনা মহামারির প্রকোপে ২০২০ সালে হয়নি মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০২১ সালেও হয় সীমিত পরিসরে। এই বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন উদ্যমে আশা-আকাঙ্খার বীজ বুনছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার দেখা যায়, চারুকলার জয়নুল গ্যালারির সামনে শিক্ষার্থীরা আঁকছেন বিভিন্ন ধরণের ছবি। মাটির সরায় প্রস্তুত করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের নকশা। প্রস্তুত করা হচ্ছে বাহারি রঙের মুখোশ। নববর্ষের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে প্রস্তুতকৃত এই শিল্পকর্মগুলো। দর্শনার্থীরা আসছেন, দেখছেন, অনেকে কিনছেনও বটে। এছাড়াও লিচুতলায় বানানো হচ্ছে বিশাল ঘোড়া ও টেপাপুতুলের কাঠামো।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বছর কাঠামো থাকবে মোট ৪টি। পাশাপাশি পুতুল, মুখোশ ও অন্যান্য শিল্পকর্মগুলো কোনো আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানান তারা। শিক্ষকদের দিক-নির্দেশনায় এসব কাজ করছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৯ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন প্রতিপাদ্যর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি একটি প্রার্থনা সঙ্গীতের অংশ। করোনাকালের যেসব নেতিবাচক পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে মলিন করেছে সেগুলো যাতে মুছে যায়, যাতে সেখান থেকে আমাদের মুক্তি মেলে, নববর্ষের আগামীর দিনগুলো যেন হয় নির্মল ও মঙ্গলময়; এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
নিয়মানুযায়ী এ বছর আয়োজনের দায়িত্বে আছেন চারুকলা অনুষদের ২২ ও ২৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তাদেরই একজন অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিরকের সাথে কথা হয়। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও অনুষ্ঠানসূচি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ ১২ তারিখ আমাদের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। ছবি মুখোশ, পাখি, স্ট্রাকচার বানানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। আশা করা যায় কাল চৈত্র সংক্রান্তির পূর্বে রাতের ভেতর আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (বুধবার) সন্ধ্যার পর বকুলতলায় আমাদের চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান আছে। এরপর ১৪ তারিখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়া আমাদের আর বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান নেই।’
একই বিভাগের ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শিফা তাসনিমকে দেখা যায় তুলির আঁচড়ে সুনিপুণ হাতে রঙিন পাখি প্রস্তুত করতে। তিনি বলেন, ‘আমি এখন পাখি রঙ করছি। কাগজ দিয়ে প্রস্তুত করার পর রং করে পাখি, মুখোশ ও অন্যান্য শিল্পকর্মগুলোর সবই আমরা নিজেদের হাতে তৈরি করি। এগুলো আমাদের বৈশাখের স্টলে বিক্রি করা হবে।’
শিক্ষকদের দিকনির্দেশনায় বিনা অনুদানে কাজের কথা উল্লেখ করে আরেক আঁকিয়ে সাগুফতা নওরীন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘প্রত্যেক বছর আমরা কিছু নির্দিষ্ট জিনিস নিয়ে কাজ করে থাকি। এগুলোর মধ্যে পাখি, মুখোশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনেকেই ধারণা করেন, এই কাজগুলোর জন্য আমরা বাইরে থেকে অনুদান পাই। অথচ এমন কিছুই নেই। আমাদের শিক্ষকগণ আমাদের দিকনির্দেশনা দেন এবং আমরা এগুলো প্রস্তুত করি। এই শিল্পকর্মগুলো বিক্রি করেই আমরা আমাদের আয়োজনের আর্থিক সহযোগিতা পাই।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তুতকৃত ছোট-বড় মুখোশগুলো ৩শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে, মাটির সরা ১ হাজার টাকা করে এবং পাখি ও বাঘ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকার ভেতর বিক্রয় করা হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ এপ্রিল ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা ভিসি চত্বর সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তান হয়ে আবার টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। ওইদিন ৫টার ভেতর সব অনুষ্ঠান সমাপ্ত করার নির্দেশন দেয়া হয়। ৫টার পর বের হওয়া ছাড়া কোনোভাবেই আর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যাবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোন ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
মেট্রোরেল প্রকল্প চলমান থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে নববর্ষের কর্মসূচি পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চিত্রদেশ//এফ টি//