
দেশের সব পলিটেকনিক অনির্দিষ্টকাল শাটডাউন ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এবার দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে টানা শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।
চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) থেকে এই শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হবে বলে সোমবার রাতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে আজ শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপরেখা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত আগামীকাল ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একযোগে শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবে।
এর আগে, গত শনিবার দুপুরে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন। সর্বশেষ গত রোববার দুপুরে জেলায় জেলায় সমাবেশ করে তারা দাবি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণায়লকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে গত দুদিনে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, গণমিছিল এবং সব জেলার ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) অফিসে অভিযোগপত্র জমা দেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা।
তবে বেশ কয়েক মাস ধরে ছয় দফা দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি করছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। গত ১৮ এপ্রিল মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, ১৬ এপ্রিল সকাল ১০টার দিক থেকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করলে তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ওই দিন সারাদেশে জেলায় জেলায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর জেরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান খানকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করে ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ শাহেলা পারভীনকে অধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সন্তুষ্ট হতে না পেরে শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন।
এর আগে, গত ১৫ এপ্রিল রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে চলমান আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি দেখলে ফের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছিলেন তারা।
তবে, কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের একজন উপদেষ্টাকে রেখে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে ১৫ এপ্রিল বিকেলে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ।
ওই কমিটির আহ্বায়ক পদে আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রসা শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব। সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. সাব্বির মোস্তফা খান, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) সদস্যসচিব প্রকৌশলী কাজী সাখাওয়াত হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের অধ্যাপক এবং সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল আজিজ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ১টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক এবং সিলেট ও রংপুর পলিটেকনিকের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফয়সাল মুফতি এবং কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কার্যনির্বাহী উপদেষ্টা ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. রহমত উল আলম। কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন বিভাগের কারিগরি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
৩. উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।