প্রধান সংবাদ

ছুটি নয়, স্বাস্থ্যবিধি মানাতেই সরকারের জোর: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার:
করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে গেলেও আপাতত লকডাউন বা সাধারণ ছুটি না দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতেই জোর দিচ্ছে সরকার।

সচিবালয়ে বুধবার সকালে মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন নিয়ে জানতে চাইলে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন সিদ্ধান্ত হয় তখন আমরা আপনাদের জানিয়ে দেব। লকডাউনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেয় না। আমরা স্বাস্থ্যবিধির ওপর বেশি জোর দিচ্ছি, স্বাস্থ্যসেবার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি।’

দেশে লম্বা একটা সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গরমের শুরু থেকে আবার বেড়ে চলছে। একটা সময় শনাক্তের হার নেমে এসেছিল ৩ এর ঘরে। সেখান থেকে শনাক্ত হার ছাড়িয়ে গেছে ১৩ শতাংশের ঘর।

মঙ্গলবার দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে ৩ হাজার ৫৫৪ জনের শরীরে, যা গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। শনাক্তের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

দেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে কি না এ ব্যাপারে সরকার থেকে কিছু বলা হচ্ছে না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি নীতিমালা বলছে, বাংলাদেশে আসলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।

ডব্লিউএইচওর নীতিমালায় বলা হয়েছে, টানা দুই সপ্তাহ পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল টানা আট সপ্তাহের বেশি।

তবে ৬ মার্চ এই শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে আসে। এরপর থেকে সেটি আরও বাড়তে থাকে। ডব্লিউএইচওর আরেক নীতিমালা অনুযায়ী, যদি টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে তাহলে নতুন ঢেউ আসছে বলে ধরা হয়।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ আমেরিকায় আরও বেশি বিধ্বংসী হয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বেশি। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগে আবারও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোগীর উৎপত্তি কমাতে হবে। রোগী যে হারে আসছে যে হারে সংক্রমিত হচ্ছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে যা ব্যবস্থা হয়েছে তাতে সংকুলান করা সম্ভব হবে না।

‘দেশকে রক্ষা করতে, দেশেরে ইকোনমি রক্ষা করতে দেশের মানুষের কাজকর্ম বজায় রাখতে হয়। স্বাস্থ্যবিধি গুলো মেনে চলতে হবে। বেশি ঘোরাঘুরি কমিয়ে আনতে হবে।’

পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে করোনা বেশি ছড়াচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের চিঠিপত্র কেবিনেটে গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে আমরা দিয়েছি। ডিসিদের কাছে গেছে। তারা এ কাজটা এখন শুরু করেছে। মোবাইল কোর্ট করবে, প্রয়োজন হলে তারা জরিমানাও করবে।’

প্রতিরোধী টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে বলে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘টিকা নিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি ছিল। টিকা নিলেই বুঝি করোনা প্রতিরোধ করা যাবে। এটা ঠিক নয়। টিকা নিলে সংক্রমিত হতে পারেন। টিকা নিলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, কিন্তু সংক্রমণ থেকে রক্ষা নাও হতে পারেন।’

করোনার নতুন ঢেউয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালের আসন ও আইসিইউগুলোতে চাপ বাড়ছে বলে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘ঢাকায় রোগী বেড়ে গেছে এদিকটা মনে রেখে ইতোমধ্যে বেশ কিছু হাসপাতাল আমরা করোনার আওতায় নিয়ে এসেছি।’

করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে বেড বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কুর্মিটোলায় ৪০০ বেড আছে, আরও ১০০ বেড বাড়াতে আমরা চেষ্টা করছি। মিটফোর্ড আমরা ১০০ বেড দিতে বলেছি। সোহরাওয়ার্দীতে আরও ১০০ বেড বাড়াতে আমরা বলেছি। রেড ক্রিসেন্ট ১০০ বেড আমরা করোনার জন্য ডেডিকেটেড করতে বলেছি।’

এতে নন করোনা রোগীদের চিকিৎসায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে জানালেন মন্ত্রী। বলেন, ‘এরমধ্যে ১৭০০/১৮০০ বেড নন করোনা রোগীদের জন্য ছিল। আমরা নন করোনা রোগীদের সরিয়ে সেটা করোনা রোগীদের জন্য করতে বলেছি। ফলে নন করোনা রোগীদের আমি মনে করি একটু কষ্ট হবে।’

ঢাকার কাছের জেলাগুলোতেও করোনা ইউনিট বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

চিত্রদেশ//এসএইচ//

 

Related Articles

Back to top button