অপরাধ ও আইনপ্রধান সংবাদ

ছাগলকাণ্ড: রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের সম্পদের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোরবানি উপলক্ষে ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে। তার বাবার পরিচয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানের নাম প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু, যা থামছে না ঈদের পরও। এবার মতিউর রহমানের বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, ব্যবসা, শেয়ার ব্যবসা, ব্যাংকে নগদ অর্থ, মেয়াদি আমানতসহ সবকিছুর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী, বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় মতিউরের নামে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এদিকে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জমা পড়া অভিযোগটি যাচাই করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও চারবার চারবার দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছিল। তবে প্রতিবারই তাকে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছে। তবে এবার কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার অভিযোগটি কমিশনের ব্যাংক শাখা থেকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এতে মতিউর এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, মতিউরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে শতকোটি টাকা। তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এ দম্পতির মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে দুর্নীতি করে উপার্জন করা মতিউরের প্রায় ৪০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। দুর্নীতি-সংক্রান্ত ঝামেলা যেন না হয় সেজন্য স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনের নামে এসব সম্পদ রেখেছেন তিনি। বসুন্ধরার ডি ব্লকের ১ নম্বর রোডে প্রায় ৪০ কোটি টাকার পাঁচ কাঠা জমির ওপর সাততলা বাড়ি রয়েছে তার।

ময়মনসিংহের ভালুকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর গ্লোবাল সুজ তার রপ্তানিমুখী জুতার কারখানা রয়েছে। এর নাম গ্লোবাল সুজ। জেসিএক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি বসুন্ধরায় ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে। এতে তার মালিকানা রয়েছে। গাজীপুর সদরের খিলগাঁও মৌজায় বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে মতিউরের।

রাজধানীর অদূরে সাভার থানার বিরুলিয়া মৌজায় আটটি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ এবং একই মৌজায় স্ত্রীর নামে ১৪.০৩ শতাংশ জমি রয়েছে তার। গ্লোবাল সুজ কোম্পানির নামে সাতটি খতিয়ানে প্রায় ৯০ কোটি টাকার ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। এছাড়া তাদের নামে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে কয়েকটি। এর বাইরে তার আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ড. মতিউর রহমান বুধবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কমিশনার থাকাকালে কেউ এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হবে, তা আমি মাথা পেতে নেব। রাজস্ব আদায় পারফরম্যান্সে কখনো ফেল করিনি। অথচ দুর্ভাগ্য আমার, চাকরি জীবনের প্রতিটি প্রমোশনের আগে দুদক তদন্ত করেছে। এখন আবার সদস্য পদে পদোন্নতির আগে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একজন ব্যবসায়ী পাওয়া যাবে না, যিনি বলতে পারবেন মতিউর রহমান তার সঙ্গে দুর্নীতি করেছেন। এটা একশ পার্সেন্ট আস্থার সঙ্গে বলতে পারি।’

Related Articles

Back to top button