চলন্ত সিঁড়িতে দুর্ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ফারিণ
বিনোদন ডেস্ক:
ছোট পর্দা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয় মুখ তাসনিয়া ফারিণ। গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের চলন্ত সিঁড়িতে মারাত্মক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন এ অভিনেত্রী। তবে দুর্ঘটনার ঘোর কাটছে না তার।
ফারিণের ভাষ্য, দুর্ঘটনার সময় বাবা-ভাই সঙ্গে না থাকলে তিনি হয়তো বাঁচতেন না। আর প্রাণে বাঁচলেও হয়তো তার পা থাকতো না কিংবা কখনও মাতৃত্বের স্বাদ পেতেন না।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিউচার পার্কের দুর্ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন তাসনিয়া ফারিণ। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আশেপাশে যমুনা ফিউচার পার্কের ফার্স্ট ফ্লোর থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামার সময় গেট দিয়ে ঢুকেই যে মেইন এস্কেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি), সেটায় আমার দুর্ঘটনা ঘটে। সিঁড়ির নিচে যে এলুমিনিয়ামের নাকি স্টিলের সেটা জানি না, সে পাত খুলে বের হয়ে ধারালো কোনা আমার পায়ে আঘাত করে। আমি সিঁড়ির ডানপাশে ছিলাম। আর ওটা ছিল ঊর্ধমুখী। আমার পরনের প্যান্ট ছিঁড়ে যায় অনেকটুকু আর পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলে যায় ও ডিপ কাট হয়, যেটা পরবর্তীতে টের পাই।
কিন্তু ঐ মুহূর্তের শুধু একটা ইমেজ (চিত্র) আমার মাথায় ঘুরে ফিরে বারবার আসছে তা হলো, কিছু বোঝার আগে সবাই গগনবিদারী চিৎকার করে উঠল আর আমি দেখলাম ডান পা স্ক্র্যাচ করে পায়ের পাশ দিয়ে মাঝখান হয়ে বাম পায়ের উপরের দিকে একটা পাত ঢুকে যাচ্ছে আর চলন্ত সিঁড়িটিও আমাকে আরও সেদিকেই ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল যদি সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে আমাকে আমার ভাই পেছন থেকে টান দিয়ে না সরাত বা আমার বাবা যদি আমাদের দুইজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে না দিত, আমি জানি না আজকে এই স্ট্যাটাস লেখার জন্য আমি বেঁচে থাকতাম কিনা। হয়তো থাকতাম, তবে আমার পা থাকত না বা আমি কখনও মা হতে পারতাম না। সে পরিস্থিতির ভয়াবহতা হয়ত লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব না। আমি নিচে নেমে দাঁড়ানোর কয়েক সেকেন্ডের কিছুই আমার মনে নেই। সমব্বেত ফেরার পর দেখি, আমার হাঁটুর উপর থেকে প্যান্ট ছেড়া এবং পুরো পা ঝা ঝা করছে। ততক্ষণে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার হলো, আমার এই ঘটনাকে আমি এক্সিডেন্ট মানতে নারাজ। কারণ আমার এই ঘটনা ঘটার কমপক্ষে পনেরো মিনিট আগে আরেক ব্যক্তির সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে। তার পায়ের মাংস ভেদ করে ওই পাতের কোনা ঢুকে যায়। তিনি নিজে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে লোকজনকে নাকি সাবধান করছিলেন এবং দায়িত্ববান কাউকে খুঁজছিলেন। শেষে কাউকে না পেয়ে হেল্প ডেস্কে যান এবং এরমধ্যে আমার এই ঘটনা ঘটে। সঙ্গে আরও একজন ভুক্তভুগীকে খুঁজে পাই।
আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে ফাইনালি একজন স্টাফ আসে এবং অনেকবার বলার পর ম্যানেজারকে কল করে। ততক্ষণে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে যাচ্ছে আর ব্যথার চেয়ে বেশি ফিল হচ্ছিল হিউমিলিয়েশন। ওখানে কোনো সিনক্রিয়েট করার চেয়ে আমার মনে হয়েছে ঠান্ডা মাথায় এটার সমাধান করা দরকার। তাই আমি বলার পর দুইজন কর্মচারী আমাদের তিন জন আহত ব্যক্তি ও তাদের সঙ্গে যারা ছিল সবাইকে বেসমেন্ট ১-এ নিয়ে যায়। আমাদের ধারণা ছিল, নিশ্চয় দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। আশ্চর্য বিষয় হল, এতবড় মলে কোনো এম্বুলেন্স অথবা ফার্স্ট রেসপন্ডার তো দূরে থাক একটা ফার্স্ট এইড বক্স নেই!
পনেরো-বিশ মিনিট তারা শুধু এই ফার্মেসি সেই ফার্মেসি ফোন করল। কেউ নাকি দোকান ছেড়ে আসতে পারবে না। অবশেষে আধাঘন্টা পর একজন আসে আর ওই দুই ব্যক্তির চিকিৎসা করে। কিন্তু ফিমেল ডক্টর ছাড়া আমার চিকিৎসা সম্ভব ছিল না। এর মধ্যে আমার ভাইকে পাঠালাম একটা ট্রাউজার কিনে আনার জন্য।
যমুনা ফিউচার পার্কের কর্তৃপক্ষের মতে, এই দূর্ঘটনা নাকি বেশি লোক ওঠার কারনে হয়েছে! তার মানে কি আপনারা আগে থেকেই জানতেন? নাকি ধারণ ক্ষমতার বেশি লোড নিয়ে আগে থেকেই এই অবস্থায় ছিল তা আপনারা টেরই পাননি? আর একজনের সঙ্গে এটা হওয়ার পরও কেনো কোনো একশন নেননি আপনারা? এস্কেলেটরের দায়িত্বে থাকা কাউকে ডাকতে বললে বলে, সে আসেনি। আর আমার এই পরিস্থিতিতে তারা আমাকে চা কফি অফার করে, যেখানে আমার বসার মত পরিস্থিতি নেই।
যা হোক কাপড় বদলে আমাদের গাড়ি করে এভারকেয়ারের ইমার্জেন্সিতে যাই। ড্রেসিং, স্টিচিং, এক্সরে, ইনজেকশনের পর রাত ১২টায় ছাড়া পাই। তাদের একজন কর্মকর্তা হসপিটাল পর্যন্ত আসে, আমরা বলার কারণে। বিলের প্রসঙ্গ উঠতেই বলে, ‘আমি কেন দিব?’ আপনাদের দুই-চার টাকার আমার দরকারও নাই, বাট মানবিকতাও নাই? যেখানে আপনারা নিজে দোষ স্বীকার করেছেন এবং আপনার কাছে কোনো ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত আমি চাইনি। একটা সামান্য ইমার্জেন্সির বিল দেওয়ার মানসিকতা আপনাদের নেই? তাদের মতে, এটার বিচার হচ্ছে। তারা অভ্যন্তরীনভাবে সুষ্ঠ (!) তদন্ত করবেন।
আজকে আমার বা অন্য কারও প্রাণ গেলেও তাদের কিছুই আসে যায় না। আমার সারা রাত ঘুম হয়নি। মেন্টালি ট্রমাটাইজড। আমার ভাই যদি আমার পেছনে আজকে না থাকত বা আমাকে ধরতে যদি একটু দেরি করে ফেলত তারপর কি হত আমি চিন্তাও করতে চাই না। আল্লাহ যাতে কাউকে জীবনে এই পরিস্থিতিতে না ফেলে। আর আপনারা লিফট বা এসকেলেটর যাই ব্যবহার করেন না কেন নিজের সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
আমি শারীরিকভাবে সুস্থ আছি। ডক্টর পাঁচ দিন বেড রেস্ট আর এন্টি বায়োটিক দিয়েছে। বোন ইনজুরি হয়নি। বসতে পারছি না আর ডান দিকে কাত হয়ে শুতে হচ্ছে। তবে মানসিক এই ট্রমা কি আদৌ কোনদিন কাটবে কিনা জানি না। সবচেয়ে বেশি ফিল হচ্ছে হতাশা। মরে গেলেই মানুষ কোনো বিচার পায় না। আমি তো বেঁচে আছি আমার আর কি বিচার হবে।
চিত্রদেশ//এফটি//