গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের ভ্রমন কাহিনী-‘মাদুরাই’ (১ম পর্ব)

মাদুরাই তামিল নাড়ুর বৃহত্তম একটি শহর। আজ নয় দিন হলো বাংলাদেশ ছেড়ে মাদুরাই (ইন্ডিয়া) এসেছি। অরবিস, বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ ট্রেনিং এ আমি মাদুরাই এসেছি।আমাকে আসতে হয়েছে, আম্মার মৃত্যুর বিশ দিন পর অনেকটা বাধ্য হয়েই। আমার ট্রেনিং এর সমস্ত আয়োজন হয়ে গিয়েছিল। মনটা আমার খুবই ভারাক্রান্ত ও কষ্টে জর্জরিত ছিল আম্মার জন্য। অরবিসের বিশেষ অনুরোধ ও প্রফেসর এনায়েত স্যারের (চক্ষু বিশেষজ্ঞ) বিশেষ আশ্বাসে আমি মাদুরাই (ইন্ডিয়া) আসতে রাজি হলাম। অবশেষে আমাকে একাই ইন্ডিয়া আসতে হলো। ৯/১১/২০১৩ তারিখ সকাল ৯টায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দেই। আমার ভিতরের প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি আমাকে এ সাহস যুগিয়েছে। রত্না, নাসিফ ও ডা: মনজুরুল হক সাহেব আমার সাথে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। আমার সাথে ওরা পাস নিয়ে ভিতরে ঢোকে। আমি ইমেগ্রেশন পার না হওয়া পর্যন্ত ওরা থাকে। তিজীর প্রয়োজনীয় কাজ থাকায় ও আসতে পারেনি।

 

পৃথিবীতে মায়ের মমতা যে কি জিনিস তা অনুধাবন করার মত হৃদয় যার নেই তারমধ্যে মায়া, মমতা, ভালবাসা বলে কিছু নেই আমার মনে হয় । ‘আম্মা’ চলে গেছেন গত মাসের বিশ তারিখ (২০.১০.২০১৩)। পৃথিবীটা এত মায়াময় কেন! আম্মাকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না। প্রতিটা মুহুর্তে আম্মার সব কিছু চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে কেন আম্মাকে ধরতে পারছি না।কেন আম্মাকে আরও বেশি করে বোঝার চেষ্টা করি নাই। আমার মার কত না কষ্ট হয়েছে। যখন ওনার নানা কষ্টের কথা বলতেন। তখন ওনাকে বেশি কথা বলার জন্য মাঝে মাঝে বকেছি। এখন মনে হচ্ছে কেন আরও হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করিনি ওনার অন্তরের অব্যক্ত বেদনাকে। এয়ারপোর্টে এসেও সবসময়ই আম্মার স্মৃতি আমাকে আবিষ্ঠ করে রাখছে। এই আবিষ্ঠতা নিয়েই সব কিছু করছি। বোর্ডিং পাস নিয়ে এসে আবার ওদের কাছে এসে বসলাম। সাথে রুটি নিয়ে এসেছিলাম । খেয়ে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য রওনা দিলাম। এয়ারপোর্টে আহম্মেদ নামে এক লোকের সাথে পরিচয় হলো। সেও চেন্নাই যাচ্ছে। লোকটিকে বেশ হেল্পফুল মনে হলো । সে তার মা ও বোন নিয়ে যাচ্ছে। লোকটির মা খুব বৃদ্ধ। তাকে হুইল চেয়ারে করে সে প্লেনে উঠালো। সে আমাকেও তার সাথে নিয়ে প্লেনে উঠলো। মায়ের প্রতি লোকটির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখে খুব ভাল লাগলো। লোকটি চেন্নাই নামবে তার মা এর চিকিৎসার জন্য। আমি চেন্নাই এয়ারপোর্টে নামবো। সেখানে হোটেল রাধা রিজেন্ট এর গাড়ি থাকবে। ড্রাইভার আমার নামের কার্ড নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে। রাধা রিজেন্টে আমি একরাত থাকবো। পরদিন ঐ ড্রাইভারই আমাকে চেন্নাই এয়ারপোর্টের টার্মিনাল ডি তে নামিয়ে দিয়ে আসবে। সেখান থেকে আমি ডমিস্টিক এয়ারলাইনে মাদুরাই আসবো।

(চলবে)

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button