কানিজ কাদীরের ভ্রমণ কাহিনি-‘মাদুরাই'(পর্ব-১৬)
এখানে বেশিরভাগ মেয়েই দেখতে কালো । কিছু উজ্জ্বল শ্যামলা মেয়েও আছে। খুব সাধারণ এরা। এই সাধারণ মেয়েগুলোই আবার হাসপাতালে কম্পিউটার এর সামনে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করে। যার যার কাজে এরা খুব সিনসিয়ার। অতি সাধারণ পোশাক পরা ছেলেমেয়েরা বেশ ভালই ইংরেজীতে কথা বলে। বিশেষ করে হাসপাতালের বিভিন্ন স্টাফরা। এখানে অল্প শিক্ষিত মেয়েদের গ্রাম থেকে তুলে এনে অল্প বেতনে চাকরি দেওয়া হয় এই অরভিন্দ আই হাসপাতালে। এই সিস্টারগুলো সাদা শাড়ি পরে খুব সুন্দর করে। শাড়ির আচঁল কোমরে ঘুরিয়ে সামনে এনে আটকে রাখে। এরা যার যার কাজ খুব যত্নের সাথে ও মনোযোগ দিয়ে করে।
অরভিন্দ আই হাসপাতালে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের চেয়ে অনেক বেশি। এইসব সিস্টাররা ডাক্তারদের এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজও করছে। ডাক্তারদের সাহায্য করছে নানাভাবে।
এখানে এসে আমি তো বিস্মিত হয়ে গেলাম এদের সংস্কৃতি দেখে। তামিলদের নিজস্ব ভাষাই শুধু নেই, এরা নিজেদের আলাদা ভাবেই তুলে ধরেছে নানাভাবে। এদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যে এত সমৃদ্ধ জানতামই না। টিভি তে প্রতিদিন এদের পুরনো ৬০-৭০ দশকের অভিনতা-অভিনেত্রীদের দেখি। তাদের গান, নাচ ছিল খুবই সমৃদ্ধ । হিন্দী ও বাংলা পুরনো ছবির নায়ক নায়িকাদের মতই ছিল এদের চেহারা, গান, নাচ, অভিনয়। এদের নাচতো একেবারেই আলাদা। ছেলেদের নাচের স্টাইলটাও খুব মজার। এরা ছেলেরা দেখা যায় অনেকেই সাদালুঙ্গি পরে ও লুঙ্গি উঠিয়ে দুইভাজ করে পরে। মাদুরাই শহরে হাসাপাতালের সামনেই রাস্তাগুলোতে লুঙ্গি পরা লোক দেখা যায়। মাদুরাই শহরে কোন রিক্সা নাই।এদের যানবাহন সাইকেল, মটর সাইকেল, অটোরিক্সা বাস ইত্যাদি। শহরে প্রায়ই দেখা যায় মেয়েরা সাইকেল চালাচ্ছে। মটর সাইকেল চালিয়ে অনেক মেয়েই অফিস ও নানা কর্মস্থলে যাতায়াত করে। এ শহরের একটা জিনিস খুব ভাললাগে যে কেউ কারো দিকে কোন খেয়াল নেই, যে যার মত নিজের মত করে চলাফেরা করছে, যার যার কাজ করছে। এই শহরে বেশ কিছু মুসলমানও আছে। মুসলিম মেয়েরা সবাই কালো বোরখা পরে। আমি যে রুমে থাকি তার পাশের জানালা দিয়ে আযানের ধ্বনি ভেসে আসে। প্রথম দিনতো আমি আযান শুনে বিস্মিত হয়ে গেছি। পরে শুনলাম এখানে অনেক মুসলিম আছে। পিছনের রাস্তায়াই একটা বড় মসজিদও আছে। ভোরে আযানের শব্দে প্রায়ই আমার ঘুম ভাঙ্গে। (চলবে)