গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের গল্প ‘লাল শার্ট’

নতুন শার্টের প্রতি ডাক্তার সাহেবের ভীষন দূর্বলতা । তারপর যদি সেটা তার পছন্দের সাথে মিলে যায় তাহলে তো কথাই নেই। জামাকাপড় মানুষের এত পছন্দ আমার জানা ছিল না। এইতো ক’দিন আগে থাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলাম। দু’জনে বেশ কেনাকাটা করেছি। প্রতিদিনই বের হতাম কেনাকাটা করার জন্য। আমি খেয়াল করলাম ওর নজর শুধু শার্ট, গেঞ্জি এইসবের দিকে।আমাকে বলতো’ যাও, তুমি ঘুরে ঘুরে তোমার পছন্দমতো কি কিনবে কিনো। ‘আমি এদিকেই আছি।’ আমি কেনাকাটা শেষ করে ওর কাছে এসে দেখি ও সেই শার্ট, গেঞ্জি কেনাতেই ব্যস্ত। আমি একটু ক্ষেপে যেতাম ‘কি, তোমার এতক্ষণ লাগে ক্যান, আর কত কিনবা।’ কেনাকাটা শেষ করে রুমে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বের হতাম।ওর গল্প শুধু শার্ট, গেঞ্জির এসবেরই বেশি। বলতো’ থাইল্যান্ডের জামাগুলো এত সুন্দর দেখছ এগুলো তো বাংলাদেশে পাবা না। ‘ তার জিন্সের শার্ট কেনার সখ হলো। জিন্সের ফুল হাতা শার্ট এক দোকানে পেয়েও গেলাে। কিন্তু প্রথম দিন সে শার্ট পারলো না। ভীষন খুতখুতে। শার্টের বোতাম ঠিক আছে কিনা, সাইজ ঠিক কিনা, কলার ঠিক কিনা, রং ঠিক কিনা ইত্যাদি যাচাই করতে করতে একদিন চলে গেল।দেখলাম তার খুব মন খারাপ। একটা জিন্সের শার্ট কিনতে পারছে না বলে।আমি বললাম ‘ যাও, যে শার্টটা দেখছো, ওটাই কিনে নিয়ে আস।’ পরের দিন আবার গেলাম।আমাকে অন্য দোকানে কেনাকাটার সুযোগ দিয়ে ও শার্ট কিনতে গেল। একটু পর শার্ট কিনে ফিরে এল জিন্সের শার্টটি একেবারে গায়ে পরে। আমি বললাম ‘বাহ, তোমাকে তো বেশ ভাল লাগছে। সে বললো, ‘একই সাইজের দুইটা শার্ট কিনেছি, একটার হাতা কেটে হাফ হাতা শার্ট করে নেব। ‘ আমি অবাক হলাম ‘শার্ট নিয়ে মানুষের এত ভাবনা।’ যাক, ঘুরে ঘুরে আরও নানা কিছু কিনলাম। দেখলাম যে মার্কেটেই যাই ওর নজর শুধুমাত্র শার্ট ও গেঞ্জির দিকে। আমি একটু রেগে যেতাম বলতাম’ এই আসতো এইদিকে , আর কত শার্ট কিনবা? ঘুরতে ঘুরতে এক মার্কেটে গেলাম। আমাকে ও অন্যকিছু কেনার জন্য পাঠিয়ে দিয়ে ও ওর শার্ট গেঞ্জি পছন্দের কাজেই লেগে গেল।এর মধ্যে ওর নজরে পড়েছে খুব সুন্দর লাল টুকটুকে কালারের এক শার্ট। সে আমাকে বলতে কিছুটা বিব্রত হতে লাগলো। তার লাল শার্টটি খুব পছন্দ হয়েছে। আমাকে ডেকে নিয়ে দেখাল” এই দ্যাখতো শার্টটা কেমন।খুব সুন্দর না রংটা। দেখছো লাল রংটা কি সুন্দর লাগতেছে। ভাবতেছি শার্টটা কিনব কিনা।’ আমি বললাম তোমার যদি পছন্দ হয় কিন।’ যদিও আমি মনে মনে খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম তার কান্ড দেখে। আর কত শার্ট, গেঞ্জি কিনবে সে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু শার্ট গেঞ্জি কেনা হয়ে গেছে। লাল শার্টের প্রতি তার অতি আগ্রহ দেখে অবশেষে বললাম’ সময় নষ্ট না করে শার্টটা কিনেই ফেল। কিন্তু থাইল্যান্ডের মহিলা সেলসম্যান শার্টের দাম একটু কমাতে চাইল না। অনেক বলার পরেও যখন দাম কমালো না। আমরা অন্য দোকানে চলে গেলাম। কিন্তু ডাক্তার সাহেব সারাক্ষণই আফসোস করছিল ‘লাল শার্টটা কিনতে চাইলাম। কি বল এটা পড়লে কি আমাকে এই বয়সে খারাপ লাগবে? আমি বললাম, ‘খারাপ লাগবে ক্যান? বয়স হলে তো একটু রঙিন কাপড়চোপড়ই পরতে হয়। আমরা আবার সেই দোকানে গেলাম। অবশেষ লালশার্টটি কেনা হল। হোটেলে ফিরে এসে সে শার্টটি পরে দেখলো বার বার বলতে থাকলো ‘ শার্টটি যা সুন্দর না।’আমি বললাম ”তুমি তো আমার চেয়ে শার্টকেই বেশি ভালবাস।

থাইল্যান্ড বেশ ভালভাবেই ঘুরে দেশে এলাম। সব জিনিসপত্র বের করলাম। ছেলেমেয়ে খুব খুশি। ডাক্তার সাহেব দেখলাম তার কাপড়গুলো আলাদা করে সুটকেসেই রেখে দিল। এর মধ্যে সে লাল শার্টটি পরে হাসপাতালে গেল। তার শার্ট দেখে নাকি সবাই প্রশংসা করলো। আমি ফেসবুক খুলে দেখি সে লালশার্ট পরা ছবিটা দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে। খুব মজা লেগেছে ছবিটা দেখে। ছবিটাতে তার মুখমন্ডলের শুধু থুতনিটা দেখা যাচ্ছে । পুরা ছবিটা জুড়েই দেখা যাচ্ছে তার লালশার্ট। আমি ওকে বললাম ‘তুমি মুখসহ ছবি না দিয়ে শুধু শার্টের ছবি দিয়েছে ক্যান? ওর উত্তর শুনে আমি অবাক ‘ আমিতো শার্টটাই দেখানো জন্য ওভাবে ছবি তুলেছি। আমি হাসতে হাসতে বললাম ‘ তুমি একটা শার্টকে এত ভালোবাস। ও উত্তর দিল ‘ হ্যা, জামা আমার খুব প্রিয়। ভাল জামা পরতে আমি খুব পছন্দ করি।
৬/১২/২০১৪

 

লেখক : কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button