গল্প-কবিতা

কানিজ কাদীরের গল্প ‘পরীর গল্প ও ওরা’ (শেষ পর্ব)

কানিজ কাদীর এর গল্প ‌‌’পরীর গল্প ও ওরা’ পড়তে চোখ রাখুন ‘চিত্রদেশ’ এর সাহিত্য পাতায়।

পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রতি শুক্রবার ‘পরীর গল্প ও ওরা’ প্রকাশিত হচ্ছে চিত্রদেশে। আজ রইল গল্পটির -শেষ পর্ব

ডা. শামীমা অমলাকে বলল- ‘অমলা, তোমার গাছের কিছু লাউশাক, লাউ ও শিম আমাকে দিয়ে দেবে কিন্তু। আমরা তো এত ফ্রেস স্ববজি পাই না।’
ডা. শফিক সুরভিকে ডেকে বলল- ‘কেমন লাগছে তোমার আমাদের এই বাড়িটা? এক সময় আরো অনেক সুন্দর ছিল। অনেকগুলো বড় ঘর ছিল। অনেক গরু ছিল, রাখাল ছিল। বাড়িভর্তি মানুষ ছিল। ধান ও ফসলে উঠান ভরে থাকত ।
সুরভি বলল, ‘বাড়িটা তো এখনো অনেক সুন্দর। শুধু আগের ঘরগুলো নেই।’
ডা. শফিক বলল- ‘ওই যে জয়নালের টিনের বড় ঘরটা দেখছো। জয়নাল যখন এই বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে থাকা শুরু করে ওখানে একটা ছনের ছোট ঘর তৈরি করে নেয়।আজ দেখ, কত বড় টিনের ঘর তৈরি করেছে। ঘরে সবই আছে। বিদ্যুত এনেছে, টিভি আছে, ফ্যান আছে। শোবার খাট করেছে। জয়নালের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ‘
অরিত্র ও সুরভি দুজনই বলাবলি শুরু করল, ‘এটা কি তাহলে ওই পরীর কাজ। ওই পরীর জন্যই মনে হয় জয়নাল চাচার এত উন্নতি হয়েছে।’
কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠোন ভরে গেল পাড়ার লোকে। মহিলারা এসেছে ডা.শামীমার কাছে। পুরুষরা এসেছে ডা. শফিকের কাছে। তাদের কত সমস্যা। ডা. শফিক খুব আনন্দ নিয়ে সবার চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। তাঁর গ্রামের রােগী । ডা. শামীমা রোগী দেখে এসে বলল- ‘দেখেছ সব মহিলা রোগীগুলো অল্প বয়সেই কেমন বুড়িয়ে গেছে। মুখের চামড়া কুচকানো, কালচে দাগ, পান খেয়ে দাঁতের অবস্থা খারাপ, চেহারার মধ্যে কোনো সজীবতা নেই। অথচ এরা কিন্তু গ্রামেই আছে। যেখানে টাটকা শাকস্ববজি, মাছ, তরকারির অভাব নেই। এদের অভাব আছে শুধু শিক্ষা ও সচেতনতার। ‘ ডা. শামীমা আরো বলল- ‘সব মহিলা রোগীর প্রায় একই কমপ্লেইন। শরীরে বল পাই না , মাথা ঘুরায়, ভাত খাবার মজা লাগে না। রোগীগুলো দেখলাম প্রায় সবাই রক্তশূন্যতায় ভুগছে, মুখে ঘা , দাঁতের সমস্যা, চোখে কম দেখা, চর্মরোগ, পা ব্যথা , মাথা ব্যথা, মেয়েলি কিছু সমস্যা ইত্যাদি নানা রোগে ভুগছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এসেছে সবাই খালি পায়ে, পেটটা বড়, নাক দিয়ে পাকা সর্দি পড়ছে, কারো বা কানপাকা। একদিনে এদের কী চিকিৎসা দেব।’ এদেরকে প্রথমে স্বাস্থ্যসচেতন শিক্ষা দিতে হবে। পায়ে একজােড়া সেন্ডেল যে ওদের কত রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে এ সচেতনতাটুকুই ওদের নেই।’
সুরভি বলল-‘আমাদের দেশে গ্রামে আরো হাসপাতাল, আরো ডাক্তার দরকার। গ্রামের লোকদের দেখে মনে হচ্ছে ওদের চিকিৎসার খুব অভাব।’
মা বললেন- ‘আগে গ্রামের মানুষদের শিক্ষিত করা জরুরি । শিক্ষা মানুষকের নিজের প্রতি সচেতন করে। এছাড়া আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্যেও এরা অনেক পিছিয়ে আছে।’

দু’টো মাইক্রোবাস নদীর ঘাটে আগে থেকেই ঠিক করাছিল।নদীর ওই পাড়ে মাইক্রোবাস। সবাই আবার একইভাবে নৌকায় যেয়ে বসল। আবারও পড়ন্ত বিকাল উপভোগ করতে করতে সবাই ঘাটে এসে থামল। মা , বাবা ,সুরভি, অরিত্র ও অন্যরা মাইক্রোবাসে যেয়ে বসল।
মাইক্রোবাস চলছে চলছে।মাইক্রোবাস চলছে ময়মনসিংহ পার হয়ে ঢাকার দিকে। জয়নালের গত রাতের গল্পটা নিয়ে আবারো কথা বলছিল সবাই।অরিত্র বলল ‘আপু, তোমার কি ঘটনাটা সত্যি মনে হয়।’ সুরভি বলল, ‘না, এটা মনে হয় জয়নাল চাচার হ্যালুসিনেশন। আমি হুমায়ূন আহমেদের গল্পে পড়েছি। এ রোগে মানুষ কল্পনায় অনেক কিছু দেখতে পায়, শুনতে পায়, ঘ্রাণ নিতে পারে, অনুভব করতে পারে।’
ডা.শফিক হাসতে হাসতে বলছিল ‘জয়নালের বউ অমলাই সেই পরী না তো। নইলে জয়নালের অবস্থার এত পরিবর্তন হলো কি করে?
ডা. শামীমা বলল- ‘কিছু একটা ঘটনা ঘটেছিল হয়তো। সেটাই ও নানা রং মাখিয়ে কল্পনায় গল্প তৈরি করে ফেলেছে। এটা সম্ভবত সবার দৃষ্টি কাড়ার জন্য আর ওকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার জন্য। এটাকে শুধুই হ্যালুসিনেশন বলা যায় না। সবাই ব্যাপারটা মধ‌্যে রহস্য খুজঁছিল। আবারো এ নিয়ে বেশ মজা করছিল।
অরিত্র ভাবছিল- ‘ইস! আমার কাছে যদি একটা নীল পরী এসে কানে কানে আমার সব পড়া মুখস্থ করিয়ে দিত। কত পড়া! কোচিং, ক্লাস টেস্ট, আর পরীক্ষা। বই দিয়ে একেবারে কত ভারী হয়ে যায় ব্যাগ। নীল পরী এসে আমার ব্যাগটাও তো ধরতে পারত।
ঢাকায় এসে সবাই পৌঁছাল প্রায় রাত দশটার দিকে। সবাই খুবই ক্লান্ত। শেফালী তাড়াতাড়ি ভাত বসিয়ে দিল। আলুভর্তা ও ডাল দিয়ে সবাই ভাত খেল। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন যার যার স্কুল, ইউনিভার্সিটি, অফিসে যেতে হবে। সেই রুটিন । গদবাধাঁ জীবন। এভাবেই চলতে থাকবে সময় ও জীবন নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে।

২৩ জানুয়ারি, ২০১০।

‘টুকরো কথা’

 

লেখক: কানিজ কাদীর

Related Articles

Back to top button