করোনা ভ্যাকসিন সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নভেল করোনাভাইরাসের সব নতুন ভ্যাকসিন, ডায়াগনোস্টিকস ও চিকিৎসাসেবা বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকের জন্য অবশ্যই সমতার ভিত্তিতে সহজলভ্য করতে হবে। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গতি বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিষয়ে শুক্রবার এক অনলাইন সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ট্রেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
কোভিড -১৯ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার কার্যকর ওষুধ, পরীক্ষা এবং ভ্যাকসিনগুলো তৈরির গতি বাড়ানোর জন্য যুগান্তকারী সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ফুসফুসের এই রোগটি সবার জন্য সাধারণ হুমকি; এটিকে আমরা পরাজিত করতে পারি একটি উপায় অবলম্বন করে।
ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নিয়ে ট্রেড্রোস বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, যখন নতুন কোনো কিছু তৈরি হয়; তখন সেটি সবার জন্য সমানভাবে সহজলভ্য হয় না। আমরা এটা ঘটতে দিতে পারি না।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, ডায়াগনোস্টিকস এবং চিকিৎসাসেবা আবিষ্কারের গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মে মাসের শুরুর দিকে বৈশ্বিক সাড়ে ৭ বিলিয়ন ইউরো তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা প্রথম ধাপ মাত্র, ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু দরকার হবে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরিল রামাফোসা করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চমৎকার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আফ্রিকা মহাদেশ এই ভাইরাসের ধ্বংসাত্মক ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি; একই সঙ্গে করোনার লড়াইয়ে বিশ্বের সহযোগিতা চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি একটি ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে দুজনের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। এলিসা গ্রানাতু নামে এক বিজ্ঞানী প্রথম ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন। আরও প্রায় ৮০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
অক্সফোর্ড অধ্যাপক সারা গিলবার্ট এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর আগে ইবোলার প্রতিষেধক তৈরির কাজ করেছিলেন তিনি। গিলবার্ট বলেন, ‘আমি এ ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। মার্সের প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করেছি। এর কী ক্ষমতা তা জানি। আমার বিশ্বাস, এই প্রতিষেধক কাজ করবে।’
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক সিএইচএডিওএক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৈরি এটিই প্রথম ভ্যাকসিন।
জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ফাইজারের তৈরি করোনার একটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সবুজ সংকেত পেয়েছে। জার্মানির সরকারের অনুমোদন পাওয়ায় শিগগিরই করোনার এই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সুস্থ ২০০ জনের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হবে। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্প্যান বলেছেন, এটি একটি ভালো লক্ষণ যে, জার্মানিতে একটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা এগিয়ে চলছে। আমরা ভ্যাকসিনটির প্রথম পরীক্ষা চালাতে পারি।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৯৩ হাজার ১৪৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৬০ হাজার ৪৪২ জন। তবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৪ জন।
করোনায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে; দেশটিতে ৫০ হাজার ২৪৩ জনের প্রাণ কেড়েছে। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ৫৪৯ জন মারা গেছেন ইতালিতে; তারপরই স্পেন।
সূত্র: রয়টার্স।
চিত্রদেশ// এস//