খেলাধুলা

এক নজরে ম্যারাডোনা

স্পোর্টস ডেস্ক:

বিশ্ব ফুটবলে নক্ষত্রপতন। মেক্সিকো বিশ্বকাপের মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনা বুধবার নিজের বাড়িতে থাকাকালিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০।

দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে ম্যারাডোনোর অর্জনের শেষ নেই। আর্জেন্টিনাকে একাই জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপ। দেশ, ক্লাবের জার্সিতে ফুটবল অঙ্গন রাঙিয়েছেন। অসাধারণ সব ড্রিবল, ধ্রুপদী শট, মুগ্ধতা ছড়ানো বল পায়ের নিখুঁত রসায়নে ম্যারাডোনা ছিলেন অনন্য, অসাধারণ, অভাবনীয়।

বৈভব, আভিজাত্য আর ঐশ্বর্যপূর্ণ পারফরম্যান্সে ম্যারাডোনা ফুটবলকেই করেছেন বিত্তশালী। এ যেন ফুটবলের ভাগ্য ম্যারাডোনো বেছে নিয়েছে গোলাকার বস্তুটিকে। ম্যারাডোনো চিরকাল থাকবেন না কিন্তু মুছে যাবে না তার গড়া কৃর্তী। প্রয়াণদিনে এক নজরে ম্যারাডোনার আদ্যোপান্ত জানা যাক,

 পুরো নাম দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লেনাস জেলায় জন্ম। ম্যারাডোনা ছিলেন চিতরো দিয়েগো ম্যারাডোনা এবং দোনা তোতা দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কোর পঞ্চম সন্তান।
 বুয়েনস আয়ারেস বস্তি ভিলা ফিয়োরিতোতে খেলার সময় ম্যারানেডার ফুটবল প্রতিভা প্রথমে নজরে এসেছিল। তখন ম্যারাডোনার বয়স মাত্র আট। ট্রেনার ফ্রান্সিসকো কর্নেজোর নজরে পড়ার পর আর্জেন্তিনোস জুনিয়র ইউথ দলে সুযোগ পান ম্যারাডোনা। তার নেতৃত্বে টানা ১৩৬ ম্যাচ অপরাজিত ছিল দল।

 ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর, নিজের ষোলোতম জন্মদিনের দশ দিন আগে আর্জেন্টিনা জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক হয় ম্যারাডোনোর। সেখানে পাঁচ বছর কাটিয়ে ১৬৭ ম্যাচে ১১৫ গোল করেন।
 ১৯৭৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে মাঠে নামেন।ম্যারাডোনার বয়স তখন ১৬ বছর ১২০ দিন।
 ১৯৭৮ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়েও হয়নি তার। কারণ, বয়স বাঁধা। বয়সে কম হওয়ার কারণে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েন।
 ১৯৭৯ সালের ২ জুন জাপানে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন ম্যারাডোনা। সেবার তার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা জেতে শিরোপা।
 ১৯৮১ সালে ১ মিলিয়ন ইউরোপে বোকা জুনিয়র্সে নাম লিখান ম্যারাডোনা। ওই বছরই প্রথম লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ নেন আর্জেন্টিনার স্টার।
 ১৯৮২ সালে প্রথমবার অংশ নিলেন বিশ্বকাপে। কিন্তু ব্রাজিলের কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরে আর্জেন্টিনা বিদায় নেন।
 ওই বছর ম্যারাডোনার ঠিকানা বদলে যায়। ৫ মিলিয়ন ইউরোতে যোগ দেন বার্সেলোনায়। তিন বছর সেখানে কাটিয়ে ৫৮ ম্যাচে ৩৮ গোল করেন।
 ১৯৮৪ সালে স্পেন ছেড়ে ইতালির ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন ম্যারাডোনা। রেকর্ড ট্রান্সফার ফি ৪.৬৮ পাউন্ডে সিরি এ ক্লাব নাপোলিতে যোগ দেন তিনি।

 ১৯৮৬ সাল ছিল ম্যারাডোনার বছর। কি পাননি ওই বছর। দেশের হয়ে একমাত্র বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ম্যারাডোনা। প্রতিযোগিতার ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ জুড়েই ছিল ম্যারাডোনার আধিপত্য। নিজে পাঁচটি গোল করেন এবং সতীর্থদের দিয়ে করান আরও পাঁচটি। কোয়ার্টার ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দুইটি গোলই ভিন্ন কারণে আজও সমাদৃত। দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে ম্যারাডোনা হাত দিয়ে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। পরবর্তীতে এই গোলের নাম দেওয়া হয় “দ্য হ্যান্ড অফ গড”। ২০০৫ সালের ২২ আগস্ট একটি টেলিভিশন শোতে ম্যারাডোনা শিকার করেন, গোলটি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই হাত দিয়ে করেছিলেন। তার মাথা বল স্পর্শ করেনি এবং সে মুহূর্তে তিনি জানতেন গোলটি অবৈধ। হাত দিয়ে গোল করার চার মিনিট পর ম্যারাডোনা দ্বিতীয় গোল করেন। মাঠের অর্ধেকেরও বেশি দৌড়ে, পাঁচ ইংলিশ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ম্যারাডোনা গোলরক্ষক পিটার শিলটনের সামনে। তাকেও ধ্রুপদী ড্রিবলিংয়ে ফাঁকি দেন। ম্যারাডোনার সেই গোল ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করে এবং ২০০২ সালে ফিফা অনলাইনে ভোটের আয়োজন করলে গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ম্যারাডোনা পান গোল্ডেন বল। পাশাপাশি ওই বছর ইউরোপের সেরা ফুটবলারও নির্বাচিত হন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।

 

 ১৯৯০ বিশ্বকাপেও ম্যারাডোনার নেতৃত্বে খেলতে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু গোড়ালির ইনজুরির কারণে ম্যারাডোনার পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। সেবার মাঠের বাইরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ম্যারাডোনা। সন্তানের পিতৃত্ব সংক্রান্ত মামলায় ম্যারাডোনার জরিমানা করা হয়েছিল। খবরে এসেছিল, ইতালিতে তার বান্ধবী ছেলে সন্তান জন্ম দিরেও ম্যারাডোনা অস্বীকার করেন। যদিও ২০০৩ সালে ম্যারাডোনা তার প্রথম সন্তানকে গ্রহণ করেন এবং ছেলে হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

 ১৯৯১ সালে ড্রাগ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় আর্জেন্টিনায় গ্রেফতার হন ম্যারাডোনা। এজন্য তাকে ইতালিও ছাড়তে হয়। খবরে আসে, ১৯৮৩ সালে বার্সেলোনায় থাকার সময় থেকে মাদক ব্যবহার শুরু করেন। নাপোলিতে খেলার সময় তিনি নিয়মিত মাদক ব্যবহার করতে শুরু করেন। এজন্য দিনের পর দিন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

 ১৯৯২ সালে স্পেনের ক্লাব সেভিয়াতে যোগ দেন । কিন্তু এক বছরের বেশি খেলতে পারেননি। তখন থেকেই তার নামের পাশে যুক্ত করা হয়,‘অস্তগামী সূর্য।’

 আর্জেন্টিনা ফিরে ম্যারাডোনার শেষ ঠিকানা নোয়েল ওল্ড বয়েজ

 ১৯৯৪ বিশ্বকাপ খেললেন। সেবারই জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে তুলে রাখেন জাতীয় দলের জার্সি।
 ১৯৯৬ সালে কোকেইন ধরা পড়ে ম্যারাডোনার শরীরে। উরুগুয়ের পুন্তা দেল এস্তে-এ ছুটি কাটানোর সময় তাকে দ্রুত একটি স্থানীয় ক্লিনিকের জরুরি কক্ষে নেয়া হয়। একটি সংবাদ সম্মেলনে চিকিত্সকগণ বিবৃত করেন যে তার হৃৎপিণ্ডের পেশিতে ক্ষতি ধরা পড়েছে। পরবর্তীতে জানা যায় যে তার রক্তে কোকেইন পাওয়া গেছে এবং ম্যারাডোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। এই ঘটনার পর তিনি মাদক পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুসরণের জন্য আর্জেন্টিনা ছেড়ে কিউবাতে চলে যান।

 

 ১৯৯৭। ফুটবলকে বিদায় বলে দেন ম্যারাডোনা। শত কোটি ভক্তদের চোখের জলে ভাসিয়ে বুট জোড়া তুলে রাখেন শোকেসে।
 ১৯৯৯ সালে আর্জেন্টিনার কনেক্স ফাউন্ডেশন তাকে হীরক কনেক্স পুরস্কার প্রদান করে যা আর্জেন্টিনার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সাংস্কৃতিক পুরস্কার। তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয় খেলাধুলায় আগের দশকে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়ার কারণে।
 ২০০০ সালে, মারাদোনা তার আত্মজীবনী Yo Soy El Diego (আমি দিয়েগো) প্রকাশ করেন যা তার নিজ দেশে তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা পায়।
 ওই বছর ফিফা ম্যারাডোনোকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করে। পাশাপাশি ওই বছরই ম্যারাডোনো হৃদযন্ত্রের সমস্যায় উরুগুয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন।
 ২০০২ সালে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তিলাভের জন্য কিউবার একটি ক্লিনিকে ভর্তি হলেন। গণমাধ্যমে এসেছিল, অতিরিক্ত কোকেইন সেবনের কারণে ম্যারাডোনা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের দ্বারা আক্রান্ত হন।
 ২০০৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স ম্যারাডোনার প্রতি সম্মান জানিয়ে তার নামে তাদের স্টেডিয়ামের নামকরণ করে।
 ১৯৮৪ সালের ৭ নভেম্বর, বুয়েনোস আইরেসে ফিয়ান্সি ক্লদিয়া ভিয়াফানিয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ম্যারাডোনা। ২০০৪ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
 ২০০৫ সালের ১৫ আগস্ট, আর্জেন্টিনার একটি টেলিভিশনের টকশো ‘La Noche del 10’ (নম্বর ১০ এর রাত) এর উপস্থাপক হিসেবে ম্যারাডোনার অভিষেক হয়। প্রথম শোতে ম্যারাডোনার অতিথি ছিলেন পেলে। ফুটবল মাঠের দুই সুপারস্টারের অনুষ্ঠান এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে দ্বিতীয় পর্বের জন্য মিছিল করেছিল সমর্থকরা। যদিও সেই সুযোগ আর হয়নি। তবে ফুটবলের অন্যান্য তারকারা ম্যারাডোনার অতিথি হয়েছিলেন। জিনেদিন জিদান, রোনালদোরা উপস্থিত হয়েছিলোর শোতে।

 ওই বছর আর্জেন্টিনার মার দেল প্লাটায় সামিট অফ দ্য আমেরিকাস-এ আর্জেন্টিনায় জর্জ ডব্লিউ বুশের উপস্থিতির বিরোধিতা করেন। একটি টি-শার্ট পরেছিলেন ম্যারাডোনা, যাতে লেখা ছিল “STOP BUSH” (এখানে “Bush” এর “s” এর স্থানে ছিল একটি স্বস্তিকা)। এবং তিনি বুশকে “আবর্জনা” বলে সম্বোধন করেন।
 ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে, ম্যারাডোনা তার বিখ্যাত নীল-সাদা ১০ নম্বর জার্সিতে আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তবে এটি ছিল তিন দিনের ইনডোর বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা।
 ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে, ম্যারাডোনা ইরানের জনগনকে সমর্থন জানানোর জন্য তার স্বাক্ষরকৃত জার্সি উপহার দেন। এটি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়।
 ২০০৮ সালে ম্যারাডোনা জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পান। ১৯ নভেম্বর, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জয় পায়।
 ম্যারাডোনার মা দালমা ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর মারা যান। সে সময় ম্যারাডোনা দুবাইয়ে ছিলেন এবং মাকে দেখার জন্য সময়মত আর্জেন্টিনা পৌছার চেষ্টাও করেন, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়।
 দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়েন ম্যারাডোনা।
 ২০১১ সালের মে মাসে ম্যারাডোনা দুবাইয়ের ক্লাব আল ওয়াসলের কোচ হিসেবে যোগদান করেন। প্রত্যাশাপূরণ করতে না পারায় ২০১২ সালে চাকরি হারান আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
 ২০১৭ সালে ম্যারাডোনাকে প্রথমবার যুক্ত করা হয় ফিফার ভিডিও গেমসে। ফিফা ১৮ এবং সকার প্রো ভার্সনে ম্যারাডোনাকে স্কোয়াডে রাখা হয়।
 ২০১৯ সালে ম্যারাডোনাকে নিয়ে একটি ডকোমেনটারি চিত্র প্রকাশ করে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড।
 বান্ধবী অলিভার মামলায় ম্যারাডোনা ২৩ মে ২০১৯ সালে গ্রেফতার হন। ম্যারাডোনা-অলিভার ছয় বছরের সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭৬ কোটি টাকার মামলা করেন অলিভা। সে মামলায় মেক্সিকো থেকে ফেরার পথে গ্রেফতার হন।
 মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় গত ২ নভেম্বর ম্যারাডোনাকে লা পালটা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি করানোর একদিন পর তার পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ম্যারাডোনা সুস্থ আছেন। কিন্তু দুইদিন পর তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করানো লাগে এবং ১১ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। তবে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মেলেনি। মদ্যপান সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সরাসরি তাঁকে বুয়েনস আয়ার্সের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় গত সপ্তাহদুয়েক ধরে সেখানেই ছিলেন তিনি।
 সেখানেই আজ চিরবিদায়। ৬৭৯ ম্যাচে ৩৪৬ গোল করা ম্যারাডোনা বিদায় জানালেন। ৬০ বছরে ছাড়লেন পৃথিবীর মায়া।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট, দ্য লাইফ অব ম্যারাডোনা, ম্যারাডোনা, উইকিপিডিয়া

চিত্রদেশ//এলএইচ//

Related Articles

Back to top button