আরো ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস, মৃত বেড়ে ৮০
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভয়াবহ করোনাভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এতে রাতারাতি আরো ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফলে চীনে এই ভাইরাসে গত কয়েকদিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০তে গিয়ে দাঁড়ালো। এছাড়া এতে আরো ২৭৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স।
সোমবার চীনা স্বাস্থ্য কমিশন এক বিবৃতিতে জানায়, করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০তে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে হুবাই প্রদেশেই মারা গেছে ৭৬ জন। এছাড়া বাকি চারজন অন্যান্য শহরের বাসিন্দা।
অথচ মাত্র একদিন আগেই (রোববার) এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৫৬ বলে ঘোষণা করেছিল বেইজিং। কিন্তু এক রাতারাতি এই ভাইরাসে আক্রান্ত আরো ২৪ জনের মৃত্যু হলো। ফলে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।
এমন এক সময় এই ভাইরাসটি দেখা দিল যখন চীন নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষের ছুটিতে চীনের কোটি কোটি মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরতে যায়। সারাদেশেই উৎসবের পরিস্থিতি বিরাজ করে।
এমন অবস্থায় এই ভাইরাস আরও বেশি ছড়িয়ে পরতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণে নববর্ষের অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাসের উদ্ভব হয় এবং মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যে এটি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কেবল চীন নয়, আশপাশের আরও প্রায় ৭টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চীনের এই ভাইরাস নিয়ে বুধবার জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এখনও পর্যন্ত কোন চিকিৎসা নেই, তাই এটি প্রতিরোধের ওপরেই সর্বাত্মক জোর দেয়া হচ্ছে।
এদিকে করোনাভাইরসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে বৃহস্পতিবার -হুয়াংগ্যাং, শিয়ানতাও ও ইজাউসহ আরো চারটি শহর বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এ ঘোষণার ফলে গত কয়েকদিনে চীনের কমপক্ষে ১০টি শহর কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই শহরগুলো থেকে দেশের অন্যত্র কোনো বাস-ট্রেন,ফেরি ও বিমান চলাচল করছে না। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শহরগুলোর ২ কোটির বেশি মানুষ।
শুধু চীন নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডের চারজন এতে আক্রান্ত হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও জাপানে একজন করে মোট চাজন এতে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে চীনের বাইরে সবমিলিয়ে এ জাতীয় ৮ রোগীর খোঁজ পাওয়া গেল।
চীনের বাইরেও রহস্যময় ভাইরাসটির বিস্তার ঘটায় বিশ্বজুড়ে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ ও মৃত্যু ঠেকানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বুধবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্মকর্তারা।
বৈঠকে এর বিস্তার রোধে বিশ্ব জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হু। এ নিয়ে গত এক দশকের মধ্যে চার চারবার এ জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করতে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান ভ্যান কেরখোভে জানিয়েছে, চীন থেকে নতুন যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে তার সংক্রমণ, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিশ্বের সমস্ত হাসপাতালকে নির্দেশনা দিয়েছে তারা। এছাড়া ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে বিশ্বের অনেক দেশ বিমানবন্দরে চীনা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নতুন চিহ্নিত ভাইরাসটির প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহানে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ভাইরাসের সঙ্গে ২০০২-০৩ সালে চীন ও হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের সংযোগ থাকতে পারে। ওই সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে প্রায় ৬৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
চিত্রদেশ //এস//